পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/৩৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্রহ সতীশ ঠিক যেন ঘুমের ঘোরে কথা কহিল—যেন এখনো তাহার বোক কাটে নাই এমনিভাবে কহিল, চিনতে পেরেচি। তুমি এসেচ উপীনদা ? ই ভাই, এসেচি । তবে পা-দুটি একবার তোল না উপনদী, অনেকদিন তোমার পায়ের ধূলো মাথায় দিতে পাইনি । উপেন্দ্র দুই হাত বাড়াইয় তাহার চিরদিনের বন্ধুকে বুকে টানিয়া লইলেন । কিছুক্ষণ পৰ্যন্ত অচেতন মুক্টির মত উভয়ে উভয়ের বক্ষ-সংলগ্ন থাকিবার পরে উপেন্দ্র আস্তে আস্তে বলিলেন, আর দেরি করিসনে সতীশ, একটু শীগগির সেরে ওঠ ভাই, আমার অনেক কাজ তোর জন্যে পড়ে রয়েচে । কি কাজ উপীনদ ? বলিয়া সতীশ পায়ের শব্দে পিছনে চাহিয়া একেবারে স্তস্থিত হইয়া রহিল । সাবিত্রীর হাত ধরিয়া সরোজিনী আসিতেছে । - লে একবার উপেক্সের পানে চাহিয়া, আর একবার তাল করিয়া চোখ রগড়াইয়। এই ছুটি রমণীর মুখের দিকে চুপ করিয়া চাহিয়া রহিল । সে যে নিজের দৃষ্টিকে প্রত্যয় করিতে সাহস করিতেছে না তাহা উপেন্দ্র এবং সাবিত্রী উভয়েই বুঝিল । সরোজিনী মুহূৰ্ত্তকাল সতীশের কঙ্কালসার পাণ্ডুর মুখের প্রতি দৃষ্টিপাত করিয়া দ্রুতপদে অগ্রসর হইয় তাহার পায়ের কাছে বিছানার উপর উপুড় হইয় পড়িয়া উচ্ছ্বসিত ক্ৰন্দন দমন করিতে লাগিল। কেহই কথা কহিল না, কিন্তু এই কান্নার ভিতরে যে কত বড় বেদন ও ক্ষমাভিক্ষ ছিল, তাহা কাহারও বুঝিতে বাকী রহিল না । সতীশ নিৰ্ব্বাক কাষ্ঠপুত্তলির মত বসিয়া রহিল, তাহার হৃদয়ের একপ্রান্ত অব্যক্ত আনন্দের উচ্ছ্বাসে যেমন তরঙ্গিত হইয়া উঠিতে লাগিল, অপর প্রাস্ত তেমনি নিদারুণ সমস্তার অভিঘাতে ভীত সংক্ষুব্ধ হইয়া উঠিল । বহুক্ষণ পৰ্য্যস্ত কাহারও মুখে কথা নাই,—দিবাশেষের এই প্রায়ান্ধকার স্তন্ধ ঘটনার মধ্যে শুধু কেবল সরোজিনীর দুনিবার ক্ৰন্দনের বেগ ও হার প্রাণপণ শাসনের নীচে রহিয়া উচ্ছ্বসিত হইয়া উঠিতে লাগিল। এই নীরবতা ভঙ্গ হইল উপেন্দ্রর কণ্ঠস্বরে । তিনি সরোজিণীর মাথার উপর ধীরে ধীরে তাহার দক্ষিণ হস্ত রাখিয়া কহিলেন, অপরাধ যায়ই হয়ে থাকু সতীশ, আমার এই বোনটিকে আজ তুই মাপ কর । ওর বুকের ভেতরের অনেকদিনের অনেক সঞ্চিত ছখ আজ তোকে সেবা করবার জন্যেই আমার সঙ্গে ওকে পাঠিয়ে দিয়েচে । কিন্তু সাবিত্রী, তুমি দিদি আমন মুখটি বিমৰ্ষ করে দাড়িয়ে থাকলে ত হবে না! তোমার এই মরণোন্মুখ দাদাটির অনেক উৎপাত অনেক ভার আজ থেকে তোমাকে বইতে হবে বোন । এসো, আমার কাছে এসে বোলো । - সাবিত্রীর নামে সরোজিনী লজ্জা, সয়ম, বেদন সমস্ত ভুলিয়া মুখ তুলিয়া હરષ્ઠ