পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎসাহিত্য-সংগ্ৰহ উপেন্দ্র অনেকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া শেষকালে বলিলেন, এখন তবে তুই যা। দিবাকর মাথা নীচু করিয়া ধীরে ধীরে বলিল, আমার রুচি নেই ছোড়দা, আমাকে মাপ কর। বিশেষ বড়লোকের মেয়ে । অকস্মাং এরূপ উত্তর ক্ষণকালের নিমিত্ত উপেন্দ্রকে অভিভূত করিয়া ফেলিল । তিনি অল্পভাষী দিবাকরের কথার গুরুত্ব বুঝিতেন । কিন্তু কোন বিষয়ে অকৃতকাৰ্য্য হওয়াও তীহার স্বভাব নয়। স্বমুখের কাগজ-কলম একপাশে ঠেলিয়া দিয়া বলিলেন, রুচি নেই। তা না থাকতে পারে, কিন্তু বড়লোকের মেয়ের অপরাধটা কি শুনি ? দিবাকর কহিল, অপরাধ নয়, কিন্তু আমি দরিদ্র । উপেন্দ্র বলিলেন, এর অর্থ এই যে, গরীবের ঘরের মেয়ে তোমাকে যেরূপ সন্মান ৰ। শ্রদ্ধা-ভক্তি করবে, ধনীর মেয়ে সেরূপ করবে না। কিন্তু জিজ্ঞাসা করি, স্ত্রীর কাছে সম্মান বা ভক্তির কতটুকু ধারণা তোমার আছে? অবশু যদি গো ধরে বলে যে, বিয়ে করবে না, সে আলাদা কথা, কিন্তু নিতান্ত অসঙ্গত অমূলক দোষের ভার আর একজনের কাধে তুলে নিয়ে নিজের দারিত্র্যের জবাবদিহি করতে চেয়ে না। আমাদের পুরাণ ইতিহাস ত পড়েছ। তাতে সীতা, সাবিত্রী প্রভৃতি সাধী স্ত্রীর যে উল্লেখ আছে, তারা রাজা-রাজড় ঘরের মেয়ে হয়েও কোন দরিদ্র ঘরের মেয়ের চেয়ে গুণে খাটো ছিলেন না । বড়লোকের ঘরের মেয়ের বিরুদ্ধে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে বলেই যে তা নিৰ্বিচারে মেনে নিতে হবে, এর কোন হেতু আমি দেখতে পাইনে । দিবাকর ভিন্ন আরো একটি শ্রোতা অত্যন্ত মনোনিবেশ করিয়া আড়ালে থাকিয়৷ শুনিতেছিল, তাহার অঞ্চলগ্রাস্কে চোখ পড়িবামাত্র উপেন্দ্র বলিয়। উঠলেন, বড়লোকের ঘরের আর একটি মেয়ে এই বাড়িতেই আছে, এর অর্ধেক রূপ-গুণ নিয়েও যদি শচী আসে ত পৃথিবীর যে কোন স্বামীই যেন তা তাগ্য বলে জ্ঞান করে। ক্ষণকাপ স্থির থাকয় পুনরায় বলিলেন, রুচি নেই বলছিলে ? ছেলেবেলায় পাঠশালে যেতে ত তোমার রুচি দেখিনি । ধৰ্ম্ম-কর্থেও কারো রুচি থাকে না, জন্মভূমির . উপরেও কারো বা অত্যন্ত অরুচি, কিন্তু তাই বলে কি এই-সব রুচির প্রশ্রয় দিতে হবে ? হঠাৎ এই সময়ে আলমারির পিছনে চুড়ির শব্দে চাকত হইয়া দিবাকর উঠিয়া দাড়াইল এবং মুহূর্তের মধ্যে কি যে স্থির করিল সেই জানে, স্বরবালার নিকটে আসিয়া কহিল, বৌদি, তুমি যদি স্বধী হও আমি ছোড়দাকে চিঠি লিখ’ে বলে দি ! স্বরবালা তন্ময় হইয়া স্বামীর কথা শুনিতেছিল, একটা অনির্বচনীয় শান্তি ও তৃপ্তির তরঙ্গ তাহান্থ সমস্ত ইচ্ছ, সমস্ত কামনা ও সমস্ত স্বাতন্মকে ভাগাইয়া জানিয়া স্বামীর