পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চরিত্রহীন রাখিয়া বসিয়া থাকিবারও কোন সন্ধপায় ছিল না। এখন, এই খাবার তৈরীর বিলম্বের সম্ভাবনা তাহাকে যেন একটা আসন্ন কর্তব্যের কঠিন দায় হইতে অব্যাহতি দিয়া গেল। সে পাশ-বালিশট জোর করিয়া জড়াইয়া ধরিয়া দেওয়ালের দিকে মুখ করিয়া চুপ করিয়া পড়িয়া রহিল। চলিয়। যাইবার সময় সাবিত্রী বাহির হইতে শিকল তুলিয়া দিয়া গিয়াছিল, ইহাও যেমন সে টের পাইয়াছিল, তাহার ‘তুমি সম্ভাষণও সে তেমনি লক্ষ্য করিয়াছিল ! নির্জন ঘরের মধ্যে এই নবলব্ধ তথ্য ছুটি যাদুকর ও তাহার মায়া-কাঠির মত তাহার মনের মধ্যে অপূর্ব ইন্দ্রজাল স্বষ্টি করিয়া চলিতে লাগিল । আজই দুপুরবেলা যে সমস্ত ভালবাসার আবর্জনা তাহার মনের ভিতর হইতে ভাটার টানে বাহিরের দিকে ভাসিয়া গিয়াছিল, জোয়ারের উল্টা ম্রোতে আবার তাহারা একে একে ফিরিয়া আসিয়া দেখা দিতে লাগিল। আজই দুপুরবেলায় আত্মাভিমানের আঘাতের স্বতীব্র জালা নিজের মনের নীচ প্রবৃত্তির দিকে তাহার চোখ খুলিয়া দিয়াছিল, জালার উপশমের সঙ্গে সঙ্গেই সে চক্ষু আপনি মুদ্রিত হইয়া গেল । এমনি করিয়া নিজেকে লইয়া খেলা করিতে করিতে একসময়ে বোধ করি লে একটু ঘুমাইয়া পড়িয়াছিল, হঠাৎ দ্বার খোলার শৰে জাগিয়া উঠিয়া পাশ ফিরিয়া দেখিল সাবিত্রী মোক্ষদাকে লইয়া ঘরে ঢুকিতেছে । মোক্ষদা চিঠিখানি সতীশের হাতে দিয়া বলিল, দেখুন ত বাবু, বৌমা কি লিখেচেন ? সতীশ সমস্তটা পড়িয়া লইয়া বলিল, তাদের ফিরতে এখন মাস-দুই দেরি আছে । মোক্ষদা জিজ্ঞাসা করিল, আর কোন কথা নেই ? সতীশ চিঠিখানি ফিরাইয়া দিয়া বলিল, না, আর বিশেষ কিছু নেই। আমার মাইনের কথাটা বাৰু? না, সে কথা নেই । টাকার কথা নাই শুনিয়া মোক্ষদা মনে মনে অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া চিঠির জন্য হাত বাড়াইয়। বলিল, তা থাকবে কেন, থাকবে যত সব বাজে-কথা ! দিন চিঠি । কাল সাবিত্রী আমাকে একখানা জবাব লিখে দিস্ত। ই ল, বাবুর খাবার দিবি কখন ? রাত কি হয়নি ? সাবিত্ৰী বলিল, বামুনঠাকুর সন্ধ্যে-আহ্নিক করবে না আমনি খাবে ? মোক্ষদা বিরক্ত হইয়াই ছিল, আরো বিরক্ত হইয়া বলিল, শোনো কথা একবার | এ কি তোর পুরুতঠাকুর, না তটচাষিবামুন পেয়েচিল যে পূজো-জাঙ্কিক করতে যাবে। সতীশ হাসিয়া ৰলিল, ও কি ঝি, সব ভুলে গেলে ! আমি ত চিরকালই সন্ধ্যেআহিক করি । ● ፃ չՖական,