পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/৭২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎসাহিত্য-সংগ্রহ । কিন্তু যাবার আগে আর একবার আঁচল দিয়ে পা মুছিয়ে দেবে না ? কিংবা জার কোনও খেলা—জার কিছু— হঠাৎ, দুজনের চোখাচোখি হুইল । সাবিত্রী এক-পা কাছে সরিয়া আসিয়া বলিল, তুমি কসাইয়ের চেয়েও নিষ্ঠুর তুমি যাও! তোমার পায়ে পড়ি, তুমি যাও । না যাও ত মাথা খুঁড়ে ময়ৰ –তুমি যাও! তাহার কণ্ঠস্বরের উত্তরে ওর এবং অস্বাভাবিক তীব্রতায় অকস্মাৎ সতীশ ভৗত হইয়া উঠিল এবং আর একটি কথাও না বলিয়া বাহির হইয়া গেল। কিন্তু অন্ধকার বারান্দায় শেষ পর্য্যন্ত আসিয়া তাহাকে থামিতে হইল । কোনদিকে সিড়ি, কোন দিকে পথ, অন্ধকারে কিছুই দেখা যায় না। পকেটে হাত দিয়া দেখিল দেশলাই নাই। এই নিরুপায় অবস্থা-সঙ্কটের মাঝখানে মিনিট-পাঁচেক চুপ করিয়া দাড়াইয়া থাকিয়! আবার তাহাকে সাবিত্রীর ঘরের দিকে ফিরিয়া আলিতে হইল। বাহির হইতে দেখিল, সাবিত্রী মেঝের উপর উপুড় হইয়া পড়িয়া আছে । আস্তে আস্তে ডাকিল, সাবিত্ৰী ! সাবিত্রী সাড়া দিল না। পুনৰ্ব্বার ডাকিয়াও সাড়া না পাইয়া সতীশ ঘরের মধ্যে আসিয়া সাবিত্রীর মাথায় হাত দিল । ঝুকিয়া পড়িয়া দেখিল, চক্ষু মুদ্রিত এবং মুখের মধ্যে অঙ্গুলি দিয়া বুঝিল, সাবিত্রী মূচ্ছিত হইয়া আছে। মুহূর্তের জন্ত তাহার মনের মধ্যে একটা ভয় ও সঙ্কোচের উদয় হইল বটে, কিন্তু পরক্ষণেই সাবিত্রীর অচেতন দেহটা তুলিয়া লইয়া শয্যায় শোয়াইয়া দিল, এবং চাদরের এক অংশ কলসীর জলে ভিজাইয়া লইয়া মুখের উপর, চোখের উপর ছিটাইয়া দিয়া একখানা হাত-পাখ লইয়া বাতাস করিতে লাগিল। মিনিট দুই-তিন পরেই সাবিত্ৰী চোখ মেলিয়া মাথার উপর কাপড় টানিয়া দিয়া পাশ ফিরিয়া শুইয়া বলিল, তুমি যাওনি ? সতীশ চুপ করিয়া বাতাস করিতে লাগিল । সাবিত্ৰী বিছানা হইতে উঠিয় প্রদীপ হাতে লইয়া বাহিরে আসিয়া দাড়াইল । বলিল, চল, তোমাকে দোর খুলে দিয়ে আসি । তার পরে নিঃশব্দে পথ দেখাইয়া নীচে নামিয়া আসিল এবং দ্বার খুলিয়া দিয়া সরিয়া দাড়াইল । মূৰ্ছিত সাবিত্রীকে শয্যায় শোয়াইতে সেই যে মুহূর্তের জন্য তাহার অচেতন দেহখানি তাহার বুকে তুলিয়া লইতে হইয়াছিল, সেই অবধি সতীশ কি রকম যেন অন্যমনস্ক হইয়াছিল, এখন দরজার বাহিরে আলিতেই তাহার চমক ভাঙ্গিয়৷ গেল এবং কি একটা কথা বলিবার জন্ত মুখ তুলিতেই সাবিত্ৰী বলিয়া উঠিল, না, জার একটি কথাও না, তোমার দেহটাকে ত তুমি পূর্বেই নষ্ট করেচ, কিন্তু সে না ♚९