পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (একাদশ সম্ভার).djvu/৮২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ তাহার কথা শেষ না হইতেই মোক্ষদা গর্জন করিয়া উঠিল, হ’লোই বা সাবিত্রীর বাৰু! হ’লোই বা জামাই! কুড়ি টাকা আঁচলে বেঁধেচি তবে গেলাস দুয়েচি! কথা শুনিয়। সাবিত্ৰী লজ্জায় স্বৰ্ণায় মরিয়া যাইতেছিল। বলিয়া উঠিল, থামো মালী, থামো ! চুপ করে ! মোক্ষদা বলিল, চুপ করব কেন ? যা বলব সামনেই বলব। তল্লটের লোক জানে পষ্ট বলিয়ে যদি কেউ থাকে ত সে মুকি ! এবার বিধুও গলা চড়াইয়া দিয়া বলিল, পষ্ট বলতে শুধু তুই জানিস, তা নয়। আমরাও জানি । জামায়ের কাছে দুখান নোট নিয়ে মদ খেয়েছিল, তিনখানা পেলে ন। জানি— মোক্ষদা গাফাইয়ু উঠয়া বলিল, যত বড় মুখ নয়—আর বলিতে পাইল না। সবিত্ৰী হাত দিয়া তাহার মুখ চাপিয়া ধরিল, এবং জোর করিয়া টানিয়া লইয়া তাহার ঘরের মধ্যে ফেলিয়া শিকল তুলিয়া দিল। তথা হইতে মোক্ষদা অকথ্য অশ্রাব্য ভাষা অবিশ্রাম বর্ষণ করিতে লাগিল । ফিরিয়া আসিয়া সাবিত্ৰী বিধুর দুটো হাত ধরিয়া বলিল, মাসী, আমাকে মাপ কর। সমস্ত দোষ আমার । তাহার নম্র কথায় শাস্ত হইয়া বিধু বলিল, তোর কি সাবি? মুকিকে চিরকাল জানি ঐ-রকম। একটু খেলে আর রক্ষে নেই, পায়ে পা তুলে দিয়ে ঝগড়া করবে। এই তার স্বভাব । যা, তুই নিজের ঘরে যা । বলিয়া বিধু সঙ্গিনীর হাতে ধরিয়া চলিয়া গেল। : সাবিত্ৰী কাঠের মত দাড়াইয়া রহিল । রোধে ও ক্ষোভে তাহার আত্মঘাতী হইতে ইচ্ছা করিতেছিল । সতীশ যে এতবড় নির্লজ্জ হইতে পারে, প্রকাশ্ব দিনের বেলায় উন্মত্ত আচরণ করিতে পারে, ইহা ত সে স্বপ্নেও ভাবিতে পারিত না । তাই কাল্পনিক নহে, একটা সত্যকার ব্যথা তাহার বুকের মধ্যে বিরাট তরঙ্গের মত গড়াইয় বেড়াইতে লাগিল । তাহার মনে হুইতে লাগিল, যে তাহার প্রিয়তম অকস্মাৎ সে যেন তাহারই চোখের স্বমুখে মরিয়া গেল, যাহাকে সে মাত্র দুইদিন পূৰ্ব্বে কটুকথায় অপমান করিয়া বিদায় দিতে বাধ্য হইয়াছিল, সে যখন এত সত্বর এত সহজে, তাহার সমস্ত আত্মসন্ত্রম বিসর্জন দিয়া এমন হীন, এমন কদাকার হইয়া ফিরিয়া আসিল, তখন ভরসা করিবার, বিশ্বাস করিবার তাহার আর কিছুই রছিল না । তাহার দুই চোখ জালা করিতে লাগিল, কিন্তু একফোটা জল আসিল না । তাহার সৰ্ব্বৰ, তাহার দেবতা, কল্পনার স্বৰ্গ, তাহার শ্রীজীবনের ধ্রুবতারা, তাহা ইহকাল-পরকাল সমস্তই যেন একমুহূর্ভে ঐ ইতস্ততঃ বিক্ষিপ্ত উচ্ছিষ্টয়াশির মাঝ १३