পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১১১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত কমললতা, পদ্মা, লক্ষ্মী, সরস্বতী এবং আরও অনেকে আসিয়া মহাসমাদরে অভ্যর্থনা করিল, কমললতা গাঢ়স্বরে কহিল, নতুনগোসাই, তুমি যে এত শীঘ্র এসে আবার আমাদের দেখা দেবে এ আশা করিনি । রাজলক্ষ্মী কথা কহিল, যেন কতকালের চেনা । বলিল, কমললতাদিদি, এ ক'দিন শুধু তোমার কথাই ওঁর মুখে, আরও আগে আসতে চেয়েছিলেন, কেবল আমার জন্যেই ঘটে ওঠেনি । এটা আমারই দোষে । কমললতার মুখ ক্ষণকালের জন্য রাঙা হইয়া উঠিল, পদ্মা ফিক করিয়া হাসিয়া চোখ ফিরাইয়া লইল । রাজলক্ষ্মীর বেশভূষা ও চেহারা দেখিয়া সে যে সম্রাস্তখরের মেয়ে তাহ সবাই বুঝিয়াছে, শুধু আমার সঙ্গে যে কি সম্বন্ধ ইহাই তাহার। নিঃসন্দেহে ধরিতে পারে নাই। পরিচয়ের জন্য সবাই উদগ্রীব হইয়া উঠিল । রাজলক্ষ্মীর চোখে কিছুই এড়ায় না, বলিল, কমললতাদিদি, আমাকে চিনতে পারচ না ? কমললতা মাথা নাড়িয়া বলিল, না । বৃন্দাবনে দেখনি কখনো ? কমললতাও নিৰ্ব্বেধ নয়, পরিহাসটা সে বুঝিল, হাসিয়া বলিল, মনে ত পড়চে না ভাই । রাজলক্ষ্মী বলিল, না পড়াই ভালো দিদি । আমি এদেশেরই মেয়ে, কখনো বৃন্দাবনের ধারেও যাইনি, বলিয়াই হাসিয়া ফেলিল। লক্ষ্মী-সরস্বতী ও অন্যান্য সকলে চলিয়া গেলে আমাকে দেখাইয়া কহিল, আমরা দু’জনে এক গায়ে এক গুরুমশায়ের পাঠশালায় পড়তুম—দুটিতে যেন ভাইবোন এমনি ছিল ভাব। পাড়ার স্ববাদে দাদা বলে ডাকতুম—বোনের মত আমাকে কি ভালই বাসতেন। গায়ে কখনো হাতটি পর্য্যন্ত দেননি । আমার পানে চাহিয়া কহিল, ই গা, বলচি সব সত্যি নয় ? পদ্ম খুশী হইয়া বলিল, তাই তোমাদের ঠিক একরকম দেখতে । দুজনেই লম্বা ছিপছিপে—শুধু তুমি ফসর্ণ, আর নতুনগোসাই কালো, তোমাদের দেখলেই বোঝা যায়। রাজলক্ষ্মী গম্ভীর হইয়া বলিল, যাবেই ত ভাই। আমাদের ঠিক এরকম ন৷ হয়ে কি কোন উপায় আছে পদ্মা । ও মা ! তুমি আমারও নাম জানো যে দেখচি। নতুনগোঁসাই বলেচে বুঝি ? বলেচে বলেই ত তোমাদের দেখতে এলুম, বললুম, সেখানে একলা যাবে কেন, আমাকেও সঙ্গে নাও । তোমার কাছে ত আমার ভয় নেই—একসঙ্গে দেখলে কেউ কলঙ্কও রটাবে না। আর রটালেই বা কি, নীলকণ্ঠের গলাতেই বিষ লেগে থাকবে, উদবুস্থ হবে না । > ● ●