পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১১২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ আমি আর চুপ করিয়া থাকিতে পারিলাম না, মেয়েদের এ যে কি রকম ঠাট্ট সে তারাই জানে। রাগিয়া বলিলাম, কেন ছেলেমাচুষের সঙ্গে মিথ্যে তামাশা করচ বলে ত ? রাজলক্ষ্মী ভালোমানুষের মত বলিল, সত্যি তামাশাটা কি তুমিই না হয় বলে দাও ? যা জানি সরল মনে বলচি, তোমার রাগ কেন ? তাহার গাম্ভীৰ্য্য দেখিয়া রাগিয়াও হাসিয়া কেলিলাম, সরল মনে বলচি ! কমললতা, এত বড় শয়তান ফাজিল তুমি সংসারে দুটি খুজে পাবে না। এর কি একটা মতলব আছে, কখনো এর কথায় সহজে বিশ্বাস ক’রো না | রাজলক্ষ্মী কহিল, কেন নিন্দে কর গোসাই ! তা হলে আমার সম্বন্ধে নিশ্চয় তোমার মনেই কোন মতলব আছে ? আছেই ত । কিন্তু আমার নেই। আমি নিষ্পাপ, নিষ্কলঙ্ক । ই যুধিষ্ঠির । কমললতাও হাসিল, কিন্তু সে উহার বলার ভঙ্গীতে বোধ হয়, ঠিক কিছু বুঝিতে পারিল না, শুধু গোলমালে পড়িল । কারণ সেদিনও আমি ত কোন রমণীর সম্বন্ধেই নিজের কোন আভাস দিই নাই । আর দেবই বা কি করিয়া। দেবার সেদিন ছিলই বা কি ! কমললত জিজ্ঞাসা করিল, ভাই তোমার নামটা কি ? আমার নাম রাজলক্ষ্মী। উনি গোড়ার কথাটা ছেড়ে দিয়ে বলেন শুধু লক্ষ্মী। আমি বলি, ওগো, ইগো । আজকাল বলচেন নতুনগোসাই বলে ডাকতে । বলেন, তবু স্বস্তি পাবো । পদ্মা হঠাৎ হাততালি দিয়া উঠিল—আমি বুঝেচি । কমললত তাহাকে ধমক দিল—পোড়ারমুখীর ভারী বুদ্ধি ! কি বুঝেচি বল ত ? নিশ্চয় বুঝেচি। বলব ? বলতে হবে না, যা । বলিয়াই সে সস্নেহে রাজলক্ষ্মীর একটা হাত ধরিয়া কহিল, কিন্তু কথায় কথায় বেলা বাড়ছে ভাই, রোদুরে মুখখানি শুকিয়ে উঠেচে। খেয়ে কিছু আলোনি জানি—চল, হাত-পা ধুয়ে ঠাকুর প্রণাম করবে, তারপরে সবাই মিলে তার প্রসাদ পাব । তুমিও এসে গোসাই। এই বলিয়া সে তাহাকে মন্দিরের দিকে টানিয়া লইয়া গেল । এইবার মনে মনে প্রমাদ গনিলাম। কারণ, এখন আসিবে প্রসাদ গ্রহণের আহবান। খাওয়া-ছোওয়ার বিষয়টা রাজলক্ষ্মীর জীবনে এমন করিয়াই গাথা যে, এ সম্বন্ধে সত্যাসত্যর প্রশ্নই অবৈধ। এ শুধু বিশ্বাস নয়-এ তাহার স্বভাব। এছাড়া সে 3 * *