পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐকান্ত চাহিল না—যেন চেনেই না। তবু যে কেন একটুখানি হাসি চাপিয়া লইল সে সেই জানে। কিংবা আমারও ভুল হইতে পারে—অসম্ভব নয়। আজ বাবাজীমশায়ের গান জমিল না। কিন্তু সে তার দোষে নয়, লোকগুলোর অধীরতায় । স্বারিকাদাস চোথ চাহিয়া রাজলক্ষ্মীকে আহবান করিয়া বলিলেন, দিদি, আমার ঠাকুরদের এবার তুমি কিছু নিবেদন করে শোনাও, শুনে আমরাও ধন্য হই। রাজলক্ষ্মী সেইদিকে মুখ করিয়া ফিরিয়া বসিল । দ্বারিকাদাস খোলটার প্রতি অঙ্গুলিনির্দেশ করিয়া বলিলেন, ওটায় কোন বাধা জন্মাবে না ত? স্বাজলক্ষ্মী কহিল, না। শুনিয়া শুধু তিনি নয়, মনোহরদাসও মনে মনে কিছু বিস্ময় বোধ করিলেন। কারণ সাধারণ মেয়েদের কাছে এতটা বোধ করি তাহারা আশা করেন না । গান শুরু হইল ! সঙ্কোচের জড়িমা, অজ্ঞতার দ্বিধা কোথাও নাই—নি:সংশয়ের কণ্ঠ অবাধ জলস্রোতের ন্যায় বহিয়া চলিল। এ বিদ্যায় সে স্বশিক্ষিতা জানি, এ ছিল তাহার জীবিকা। কিন্তু বাংলার নিজস্ব সঙ্গীতের ধারাটাও সে যে এত যত্ন করিয়া আয়ত্ব করিয়াছে তাহা ভাবি নাই। প্রাচীন ও আধুনিক বৈষ্ণব কবিগণের এত বিভিন্ন পদাবলী যে তাহার কণ্ঠস্থ তাহা কে জানিত ! শুধু মুরে তালে লয়ে নয়, বাক্যের বিশুদ্ধতায়, উচ্চারণের স্পষ্টতায় এবং প্রকাশভঙ্গীর মধুরতায় এই সন্ধ্যায় সে যে বিস্ময়ের হষ্টি করিল তাহ। অভাবিত। পাথরের ঠাকুর তাহার সম্মুখে, পিছনে বসিয়া ঠাকুর দুৰ্ব্বাস৷ —কাহাকে বেশী প্রসন্ন করিতে যে তাহার এই আরাধনা বলা কঠিন। গঙ্গামাটির অপরাধের এতটুকু খলনও যদি ইহাতে হয়, কি জানি একথা তাহার মনের মধ্যে আজ ছিল কি না । সে গাহিতেছিল— “একে পদ-পঙ্কজ, পঙ্কে বিভূধিত, কন্টকে জরজর ভেল, তুয়া দরশন-আশে কিছু নাহি জানলু চিরন্থখ অব দূরে গেল। তোহারি মুরলি যব শ্রবণে প্রবেশল ছোড়হু গৃহ-মুখ আশ, পন্থক দুখ তৃণছ করি না গণন্থ, কহৰ্তহি গোবিন্দদাস ॥” বড়গোসাইজীর চোখে ধারা বহিতেছিল ; তিনি আবেশ ও আনন্দের প্রেরণায় উঠিয়া দাড়াইয়া বিগ্রহের কণ্ঠ হইতে মল্লিকার মালা তুলিয়া লইয়া রাজলক্ষ্মীর গলায় পরাইয়া দিলেন, বলিলেন, প্রার্থনা করি তোমার সমস্ত অকল্যাণ যেন দূর হয় ভাই । রাজলক্ষ্মী হেট হইয় তাহাকে নমস্কার করিল, তারপরে উঠিয়া আমার কাছে আসিয়া পায়ের ধূলা সকলের সম্মুখে মাথায় লইল, চুপি চুপি বলিল, এ মালা তোলা 》