পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ সারা হইয়াছে—কিন্তু কোন পথ তাহার চোখে পড়িতেছে না। হঠাৎ হাউ হাউ করিয়া কাদিয়া ফেলিয়া বলিল, আমার বাবু বোধ হয় আর বেঁচে নেই। মুখ্য চাষা মানুষ আমি, কখনো গায়ের বার হইনি, কোথায় সে দেশ, কোথা দিয়ে যেতে হয় জানিনে, নইলে ঘরসংসার সব ভেসে গেলেও নবীন নাকি থাকে এখনো বাড়ি বসে ! চক্কোত্তিমশাইকে দিনরাতু সাধচি, ঠাকুর দয়া করে, তোমাকে জমি বেচে আমি একশ টাকা দেব, আমাকে একবার নিয়ে চলে, কিন্তু বিটলে বামুন নড়লে না। কিন্তু এও বলে রাখচি বাবু, আমার মনিব যদি যায় মারা, চকোক্তিকে ঘরে আগুন দিয়ে আমি পোড়াব, তারপর সেই আগুনে নিজে মরব আত্মহত্যা করে। অত বড় নেমকহারামকে আমি জ্যাস্ত রাখব না । তাহাকে সাস্তুনা দিয়া জিজ্ঞাসা করিলাম, জেলার নাম জানো নবীন। নবীন কহিল, কেবল শুনেচি গাখানা আছে নাকি নদে জেলার কোন একটেরে, ইস্টিশান থেকে অনেকদূর যেতে হয় গরুর গাড়িতে। বলিল, চকোক্তি জানে, কিন্তু বামুন তাও বলতে চায় না । নবীন পুরাতন চিঠিপত্র সংগ্ৰহ করিয়া আনিল, কিন্তু সে-সকল হইতে কোন হদিস মিলিল না। কেবল মিলিল এই খবরটা যে, মাস-দুই পূৰ্ব্বেও বিধবা কন্যার বিয়ে বাবদ চক্রবর্তী শ'দুই টাকা গহরের কাছে আদায় করিয়াছে। বোক গহরের অনেক টাকা, মৃতরাং অক্ষম দরিদ্রের ঠকাইবেই, এ লইয়া ক্ষোভ করা বৃথা, কিন্তু এত বড় শয়তানিও সচরাচর চোখে পড়ে না। নবীন বলিল, বাবু মলেই ওর ভালো, একেবারে নিঝ ঞ্জাট হয়ে বঁাচে । একপয়সাও আর ধার শোধ করতে হয় না। অসম্ভব নয়। গেলাম দু’জনে চক্ৰবৰ্ত্তীর গৃহে । এমন বিনয়ী, সদালাপী-পরদুঃখকাতর ভদ্র ব্যক্তি সংসারে দুল্লভ। কিন্তু বৃদ্ধ হইয়া স্মৃতিশক্তি র্তাহার এত ক্ষীণ হইয়াছে যে, কিছুই তাহার মনে পড়িল না, এমন কি জেলার নাম পৰ্য্যস্ত না । বহু চেষ্টায় একটা টাইমটেবল সংগ্ৰহ করিয়া উত্তর ও পূৰ্ব্ববঙ্গের সমস্ত রেল স্টেশন একে একে পড়িয়া গেলাম, কিন্তু স্টেশনের আদ্যাক্ষর পর্য্যন্ত তিনি স্মরণ করিতে পারিলেন না । দুঃখ করিয়া বলিলেন, লোকে কত কি জিনিসপত্র টাকাকড়ি ধার বলে চেয়ে নিয়ে যায় বাবা, মনে করতে পারিনে, আদায়ও হয় না । মনে মনে বলি মাথার ওপর ধৰ্ম্ম অচেন, তিনিই এর বিচার করবেন। নবীন আর সহিতে পারিল না, গর্জন করিয়া উঠিল, ই, তিনিই তোমার বিচার করবেন, না করেন করব আমি । চক্রবর্তী মেহাত্ৰ-মধুরকণ্ঠে বলিলেন, নবীন, মিছে রাগ করিস কেন দাদা,

  • ३३