পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১২২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ গণক উড়িয়া ব্রাহ্মণ, বেশ বাঙলা বলিতে পারে—বাঙালী বলিলেই হয়—সেও হাসিয়া কহিল, না মশাই, টাকার জন্তে নয়, টাকা আমি অনেক রোজগার করি । সত্যিই এমন ভালো হাত আমি আর দেখিনি। দেখবেন, আমার হাতদেখা কখনো মিথ্যে হবে না। বলিলাম, ঠাকুর, হাত না দেখে কিছু বলতে পারো কি ? সে কহিল, পারি। একটা ফুলের নাম করুন! বলিলাম, শিমুল ফুল । গণক হাসিয়া কহিল, শিমুল ফুলই সই! আমি এর থেকেই বলে দেব আপনি কি চান। এই বলিয়া সে খড়ি দিয়া মিনিট-দুই অশক কষিয়া হিসাব করিয়া বলিল, আপনি চান একটা খবর জানতে । কি খবর ? সে আমার প্রতি চাহিয়া বলিতে লাগিল, না—মামলা-মকদ্দমা নয় ; আপনি কোন লোকের খবর পেতে চান । খবরটা বলতে পার ঠাকুর ? পারি। খবর ভাল, দু-একদিনেই জানতে পারবেন। - শুনিয়া মনে মনে একটু বিস্মিত হইলাম এবং আমার মুখ দেখিয়া সকলেই তাহ অম্লমান করিল। রাজলক্ষ্মী খুশী হইয়া বলিল, দেখলে ত । আমি বলচি ইনি খুব ভালো গোলেন, কিন্তু তোমরা কিছুই বিশ্বাস করতে চাও না—হেসে উড়িয়ে দাও । কমললতা বলিল, অবিশ্বাস কিসের ? নতুনগোঁসাই, দেখাও ত ভাই তোমার হাতটা একবার ঠাকুরকে । আমি করতল প্রসারিত করিয়া ধরিতে গণক নিজের হাতে লইয়া মিনিট দুই-তিন সযত্নে পর্য্যবেক্ষণ করিল, হিসাব করিল, তারপরে বলিল, মশায়, আপনার ত দেখি মস্ত ফাড়া— ফাড়া ? কবে ? খুব শীঘ্র । মরণ-র্বাচনের কথা ! চাহিয়া দেখিলাম রাজলক্ষ্মীর মুখে আর রক্ত নাই—ভয়ে সাদা হইয়া গিয়াছে। গণক আমার হাতটা ছাড়িয়া রাজলক্ষ্মীকে বলিল, দেখি মা তোমার হাতটা আর একবার— না । আমার হাত দেখতে হবে না—হয়েছে। তাহার তীব্র ভাবাস্তর অত্যন্ত স্পষ্ট। চতুর গণক তৎক্ষণাৎ বুঝিল হিসাবে তাহার স্থূল হয় নাই, বলিল, আমি ত দর্পণ মাত্র মা, ছায়া যা পড়বে তাই আমার > > 8