পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐকাস্ত বড়গোসাই বলিলেন, পারবে না আনন্দময়ী—পারবে না। ফেলে আসতে পারবে না । রাজলক্ষ্মী বলিল, নিশ্চয় পারব । সময়ে সময়ে আমার ইচ্ছে হয় গোসাই, যেন আমি শীগগির মরি। বড়গোঁসাই বলিলেন, এ ইচ্ছে ত বৃন্দাবনে একদিন তার মুখেও প্রকাশ পেয়েচে ভাই, কিন্তু পারেননি। হা, আনন্দময়ী কথাটি তোমার কি মনে নেই ? সখি ! কারে দিয়ে যাব, তারা কাচুসেবার কিবা জানে— বলিতে বলিতে তিনি যেন অন্যমনস্ক হইয়া পড়িলেন, কহিলেন, সত্য প্রেমের কতটুকুই বা জানি আমরা ? কেবল ছলনায় নিজেদের ভোলাই বৈ ত নয়! কিন্তু তুমি জানতে পেরেচ ভাই । তাই বলি, তুমি যেদিন এ প্রেম শ্ৰীকৃষ্ণে অর্পণ করবে অনিন্দময়ী— শুনিয়া রাজলক্ষ্মী যেন শিহরিয়া উঠিল, ব্যস্ত হইয় তাহাকে বাধা দিয়া বলিল, এমন আশীৰ্ব্বাদ ক’রো না গোসাই, এ যেন না কপালে ঘটে। বরঞ্চ আশীৰ্ব্বাদ করে। এমনি হেসে-খেলেই একদিন যেন ওঁকে রেখে মরতে পারি। কমললতা কথাটা সামলাইয়া লইতে বলিল, বড়গোসাই তোমার ভালবাসার কথাটাই বলেছেন রাজু, আর কিছু নয় । আমিও বুঝিয়াছিলাম অনুক্ষণ অন্য ভাবের ভাবুক দ্বারিকাদাস—তাহার চিস্তার ধারাটা সহসা আর এক পথে চলিয়া গিয়াছিল মাত্র । রাজলক্ষ্মী শুল্কমুখে বলিল, একে ত এই শরীর, তাতে একটা না একটা অমুখ লেগেই আছে—একগুঁয়ে লোক, কারও কথা শুনতে চান না—আমি দিনরাত কি ভয়ে ভয়েই যে থাকি দিদি, সে আর জানাব কাকে ? এইবার মনে মনে আমি উদ্বিগ্ন হইয়া উঠিলাম, যাবার সময়ে কথায় কথায় কোথাকার জল যে কোথায় গিয়া দাড়াইবে তাহার ঠিকানা নাই। আমি জানি, আমাকে অবহেলায় বিদায় দেওয়ার যে মৰ্ম্মাস্তিক আত্মগ্লানি লইয়া এবার রাজলক্ষ্মী কাশী হইতে আসিয়াছে, সৰ্ব্বপ্রকার হাস্ত-পরিহাসের অন্তরালেও কি একটা অজান। কঠিন দণ্ডের আশঙ্কা তাহার মন হইতে ঘুচিতেছে না । সেইটা শাস্ত করার অভিপ্রায়ে হাসিয়া বলিলাম, তুমি যতই কেননা লোকের কাছে আমার রোগাদেহের নিন্দে করে লক্ষ্মী, এ দেহের বিনাশ নেই। আগে তুমি না মরলে আমি মরুচিনে এ নিশ্চয়— কথাটা সে শেষ করিতেও দিল না, খপ করিয়া আমার হাতটা কেলিয়া বলিল, আমাকে ছুয়ে এদের সামনে তবে তুমি তিন সত্যি করে। বলে এ কথা কখনো মিথ্যে হবে না । বলিতে বলিতেই উদগত অশ্রীতে দুই চক্ষু তাহার উপচাইয়া উঠিল । } Yo