পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৩২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কেননা ঘটুক। এ বিদ্যা দিয়াছে তাহাকে কমললতা। সংসারে একটিমাত্র মানুষের কাছেও যে এই দর্পিত নারী হেঁট হইয়া আপন দুঃখের সমাধান ভিক্ষা করিয়াছে এই কথা নিঃসংশয়ে অনুভব করিয়া মনের মধ্যে ভারী একটি তৃপ্তি বোধ করিলাম । উভয়েই কিছুক্ষণ নিঃশব্দে থাকিয়া রাজলক্ষ্মী সহসা বলিয়া উঠিল, রাজপুত্র হঠাৎ মারা গেলেন, কিন্তু মা আবার চক্রাস্ত করলেন আমাকে বিক্রী করবার— এবার কার কাছে ? অপর একটি রাজপুত্ৰ—তোমার সেই বন্ধু-রত্নটি—যার সঙ্গে শিকার করতে গিয়ে —কি হ’লে মনে নেই ? বলিলাম, নেই বোধ হয় । অনেকদিনের কথা কিনা। কিন্তু তারপরে ? রাজলক্ষ্মী বলিল, এ ষড়যন্ত্র খাটলে না। বললুম, মা, তুমি বাড়ি যাও । মা বললেন, হাজার টাকা নিয়েচি যে । বললুম, সে টাকা নিয়ে তুমি দেশে যাও, দালালীর টাকা যেমন করে পারি আমি শোধ দেব। বললুম, আজ রাত্রির গাড়িতেই যদি বিদায় না হও মা, কাল সকালেই দেব আমি আপনাকে আপনি বিক্ৰী করে মা-গঙ্গার জলে । জানো ত মা আমাকে, আমি মিথ্যে ভয় তোমাকে দেখাচ্ছিনে। মা বিদায় হলেন । তার মুখেই আমার মরণ-সংবাদ পেয়ে তুমি দুঃখ করে বলেছিলে—আহা! মরে গেল ! এই বলিয়া সে নিজেই একটুখানি হাসিল, বলিল, সত্যি হলে তোমার মুখের সেই আহাটুকুই আমার ঢের । কিন্তু এবার যেদিন সত্যি সত্যি মরব সেদিন কিন্তু দু’ফোটা চোখের জল ফেলো। বলো, পৃথিবীতে অনেক বর-বন্ধু অনেক মালা-বদল করেচে, তাদের প্রেমে জগৎ পবিত্র পরিপূর্ণ হয়ে আছে, কিন্তু তোমার কুলট রাজলক্ষ্মী তার ন’বছর বয়সের সেই কিশোর বরটিকে একমনে যত ভালবেসেচে এ সংসারে তত ভালো কেউ কোনদিন কাউকে বাসেনি। আমার কানে কানে তখন বলবে ব'লো এই কথাগুলি ? আমি মরেও শুনতে পাব । একি, তুমি কাদচ যে ! সে চোখের জল আঁচলে মুছিয়া ফেলিয়া বলিল, নিরুপায় ছেলেমানুষের ওপর ভার আত্মীয়স্বজন যত অত্যাচার করেচে অন্তৰ্য্যামী ভগবান কি তা দেখতে পাননি ভাবে ? এর বিচার তিনি করবেন না, চোখ বুজেই থাকবেন ? বলিলাম, থাকা উচিত নয় বলেই মনে করি। কিন্তু তার ব্যাপার তোমরাই ভালো জানো, আমার মত পাষণ্ডের পরামর্শ তিনি কোনকালেই নেন না । রাজলক্ষ্মী বলিল, কেবল ঠাট্ট ! কিন্তু পরক্ষণেই গম্ভীর হইয়া কহিল, আচ্ছা, লোকে যে বলে স্ত্রী-পুরুষের ধৰ্ম্ম এক না হলে চলে না, কিন্তু ধৰ্ম্মে-কৰ্ম্মে তোমার > & 8