পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্রীকান্ত ঘর। এ জন্মে রইল আমার ত্রিভুবন—এর বাইরে যেন না কখনো দৃষ্টি যায়। জিজ্ঞাসা করিলাম, তোমার রান্নাঘর ? আনন্দ সন্ন্যাপী-মানুষ, ওখানে চোখ না দিলে যে তাকে একটা দিনও রাখা যাবে না, কিন্তু তার সন্ধান পেলে কি করে ? কবে আসবে সে ? রাজলক্ষ্মী বলিল, সন্ধান দিয়েচেন কুশারীমশাই—আনন্দ আসবে বলচে খুব শীঘ্ৰ, তারপরে সকলে মিলে যাব গঙ্গামাটিতে—থাকব সেখানে কিছুদিন । বলিলাম, তা যেন গেলে, কিন্তু তাদের কাছে গিয়ে এবার তোমার লজ করবে না ? রাজলক্ষ্মী কুষ্ঠিতহাস্তে মাথা নাড়িয়া বলিল, কিন্তু তার ত কেউ জানে ন! কাশীতে আমি নাক-চুল কেটে সঙ সেজেছিলুম ? চুল আমাপ অনেকটা বেড়েচে, আর নাক গেছে বেমালুম জুড়ে—দাগটুকু পর্য্যস্ত নেই। আর তুমি যে আছ সঙ্গে, আমার সব অন্যায় সব লজ্জা মুছে নিতে । একটু থামিয়া বলিল, খবর পেয়েচি সেই হতভাগী মালতীটা এসেছে ফিরে, সঙ্গে এনেচে তার স্বামীকে । আমি তাকে দেব একটা হার গড়িয়ে । বলিলাম, তা দিয়ো, কিন্তু আবার গিয়ে যদি স্বনন্দার পাল্লায় পড় -- রাজলক্ষ্মী তাড়াতাড়ি বলিয়া উঠিল, না গো না, সে ভয় আর নেই, তার মোহ আমার কেটেচে । বাপরে বাপ ; এমন ধৰ্ম্মবুদ্ধি দিলে যে দিনেরাতে না পারি চোখের জল সামলাতে, না পারি খেতে শুতে । পাগল হয়ে যে যাইনি এই ঢের । এই বলিয়া সে হাসিয়া কহিল, তোমার লক্ষ্মী আর যাই হোক, অস্থির মনের লোক নয় । সে সত্যি বলে একবার যখন বুঝবে তাকে আর কেউ টলাতে পারবে না। একটুখানি নীরব থাকিয়া পুনশ্চ বলিল, আমার সমস্ত মনটি যেন এখন আনন্দে ডুবে আছে, সব সময়েই মনে হয় এ জীবনের সমস্ত পেয়েছি, আর আমার কিছু চাইনে । এ যদি না ভগবানের নির্দেশ হয় ত আর কি হবে বলে ত? প্রতিদিন পুজো করে ঠাকুরের চরণে নিজের জন্যে আর কিছু কামনা করিনে, কেবল প্রার্থনা করি এমনি আনন্দ যেন সংসারে সবাই পায় । তাইত আনন্দ-ঠাকুরপোকে ডেকে পাঠিয়েচি তার কাজে এখন থেকে কিছু কিছু সাহায্য করব বলে । বলিলাম, ক’রো ! রাজলক্ষ্মী নিজের মনে কি ভাবিতে লাগিল, সহসা বলিয়া উঠিল, দ্যাখে, এই স্বনন্দ মেয়েটির মত এমন সং, এমন নির্লোভ, এমন সত্যবাদী মেয়ে দেখিনি, কিন্তু ওর বিষ্ঠের বঁাজ যতদিন না মরবে ততদিন ও বিষ্ঠে কাজে লাগবে না । কিন্তু সুনন্দার বিদ্যের দপ ত নেই । রাজলক্ষ্মী বলিল, না, ইতরের মত নেই—আর সে-কথাও আমি বলি নি । ॐ ॐ * १ऍ-s*