পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ আবার একদিন সকালে গঙ্গামাটিতে আসিয়া উপস্থিত হইলাম। সেবার আনন্দ ছিল অনাহূত অতিথি, এবারে সে আমন্ত্রিত বান্ধব । বাড়িতে ভিড় ধরে না, গ্রামের আত্মীয়-অনাত্মীয় কত লোকই যে আমাদের দেখিতে আসিয়াছে, সকলের মুখেই প্রসন্ন হাসি ও কুশল প্রশ্ন । রাজলক্ষ্মী কুশারীগৃহিণীকে প্রণাম করিল ; স্বনন্দ রান্নাঘরে কাজে নিযুক্ত ছিল, বাহিরে আসিয়া আমাদের উভয়কে প্রণাম করিয়া বলিল, দাদা, আপনার শরীরট। ত ভালো দেখাচ্চে না । রাজলক্ষ্মী কহিল, ভালো আর কবে দেখায় ভাই ? আমি ত পারলুম না, এবার তোমরা যদি পাের এষ্ট আশাতেই তোমাদের কাছে এনে ফেললুম। আমার বিগত দিনের অস্বাস্থ্যের কথা বড়গিল্পীর বোধ হয় মনে পড়িল, স্নেহাৰ্দ্ৰকণ্ঠে ভরসা দিয়া কহিলেন, ভয় নেই ম', এদেশের জল-হাওয়ায় উনি ফু’দিনেই সেরে উঠবেন । অথচ, নিজে তবিয়া পাইলাম না, কি মামাব হইয়াছে এবং কিসের জন্তই বা এত দুশ্চিস্তা ! অতঃপর নানাবিধ কাজের আয়োজন পূর্ণোদ্যমে শুরু হইল! পোড়ামাটি ক্রয় করার কথাবার্তা দামদপ্তর হইতে আরম্ভ করিয়া শিশু-বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার স্থানাম্বেষণ প্রভৃতি কিছুতেই কাহারো আলস্ত রহিল না। শুধু আমিষ্ট কেবল মনের মধ্যে উৎসাহ বোধ করি না। হয়ত এ আমার স্বভাব, হয়ত লা ইহা আর কিছু একটা যাহা দৃষ্টির অগোচরে ধীরে ধীরে আমার সমস্ত প্রাণশক্তির মূলোচ্ছেদ করিতেছে । একটা সুবিধা হইয়াছিল আমার ঔদাস্তে কেহ বিম্মিত হয় না, যেন আমার কাছে অন্য কিছু প্রত্যাশা করা অসঙ্গত। আমি দুৰ্ব্বল, আমি অসুস্থ, আমি কখন আছি কখন নাই । অথচ কোন অস্থখ নাই, থাই-দাই থাকি । আনন্দ তাহার ডাক্তারি-বিদ্যা লইয়া মাঝে মাঝে আমাকে নড়াচাড়া দিবার চেষ্টা করিলেই রাজলক্ষ্মী সস্নেহ অঙ্গুযোগে বাধা দিয়া বলে, ওকে টানাটানি করে কাজ নেই ভাই, কি হতে কি হবে, তখন আমাদের ভুগে মরতে হবে। আনন্দ বলে, যে ব্যবস্থা করেচেন ভোগার মাত্রা এতে বাড়বে বই কমবে না দিদি । এ আপনাকে সাবধান করে দিচ্চি । রাজলক্ষ্মী সহজেই স্বীকার হইয়া বলে, সে আমি জানি আনন্দ, ভগবান আমার জন্মকালে এ দুঃখ কপালে লিখে রেখেচেন । ইহার পরে আর তর্ক চলে না । 》 출