পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৭৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বামুনের মেয়ে খোচা লেগেচে, কোন পিরানটায় একটু দাগ ধরেচে, জুতো-জোড়াটার কোথায় একরাত সেলাই কেটেচে—এই নিয়েই দিবারাত্তির আছিল, এ-ছাড়া সংসারে আর যেন কোন কাজ নেই তোর । সন্ধ্যা মুখ তুলিয়া একটুখানি হাসিয়া কহিল, বাবার যে কিছু নজরে পড়ে না মা । জবাব শুনিয়া মা খুশী হইলেন না, বলিলেন, পড়বে কি করে,—বিনি-পয়সার ডাক্তারিতে সময় পেল ত! বলি, দুলে মাগীরা গেল ? যাবে বই কি মা । কিন্তু সে কবে ? ছোয়া-ন্যাপা করে জাতজন্ম ঘুচে গেলে, তার পরে ? আবার যে বড়ো ছুচে সুতো পরাচ্চিস । উঠবিনে বুঝি ? তুমি যাও ন মা, আমি এখুনি যাচ্চি । এই অমুখ শরীরে যা ইচ্ছে তুমি কর গে মা—তোমাদের দুজনের সঙ্গে বকতে বকতে আমার মাথা গরম হয়ে গেল। সংসারে আর আমার দরকার নেই—এইবার অামি শাশুড়ীর কাছে গিয়ে কাশীবাস করব—-ত কিন্তু তোমাদের স্পষ্ট করে জানিয়ে দিচ্চি । এই বলিয়া জগদ্ধাত্রী ক্ৰোধতরে একটা পিতলের কলসী তুলিয়া লইয়া খিড়কীর পুকুরের দিকে দ্রুতপদে চলিয়া গেলেন । সন্ধ্য আনত-মুখে মুখ টিপিয়া শুধু একটু হাসিল, জননীর কোন কথার উত্তর দিল না। তাহার সেলাই প্রায় শেষ হইয়াছিল, ছুচ-সুতা প্রভৃতি এখনকার মত একটা ছোট সাবানের বাক্সে গুছাইয়া ব্রাথিয়া উঠিবার উপক্রম করিতেছিল ; তাহার পিতার সোরগোলে চমকিয়া মুখ তুলিল। তিনি সদাই ব্যস্ত—এইমাত্র বাড়ি ঢুকিয়াছেন, হাতে একটা হোমিওপ্যাথি ঔষধের ছোট বাক্স এবং বগলে চাপ কয়েকখানি ডাক্তারি বই । মেয়েকে দেখিয়াই বলিয়া উঠিলেন, সন্ধ্যে, ওঠ ত মা, চট্‌ করে আমার বড় ওষুধের বাক্সটা একবার,-কি যে করি কিছুই ভেবে পাইনে— এমনি মুস্কিলের মধ্যে— সন্ধ্য তাড়াতাড়ি উঠিয়৷ পিতার হাতের বাক্স ও বইগুলো লইয়া একধারে রাখিয়া দিল । বাবান্দায় ইতিপূৰ্ব্বে যে মাছরখানা পাতিয়া রাখিয়াছিল তাহারই উপর হাত ধরিয়া বসাইয়া দিয়া পাখার বাতাস করিতে করিতে বলিল, আজ কেন তোমার এত দেরি হ’লে৷ বাবা ? দেরি । আমার কি নাবার-খাবার ফুরসত আছে তোরা ভাবিস ? যে রুগীটির কাছে না যাব তারই রাগ, তারই অভিমান । প্রিয় মুখুয্যের হাতের একফোটা ওষুধ না পেলে যেন আর কেউ বঁাচবে না। ভয় যে নেহাৎ মিথ্যে তা যদিও বলতে পারিনে, কিন্তু প্রিয় মুখুয্যে ত একটাই—হটো ত নয়! তাদের বলি–এই নন্দ মিত্তির at