পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বামুনের মেয়ে কত টাকা মা ? কত । দশ-বারো টাকার কম নয় বললুম! এক মুঠে টাকা কিনা স্বচ্ছন্দে– কথাটা তাহার সমাপ্ত হইতে পাহল না। প্রিয়বাবু আর্দ্রবস্ত্রে ব্যতিব্যস্তভাবে বাড়ি ঢুকিতে ঢুকিতে চেচাইয়া ডাকিলেন, সক্ষ্যে গামছা—গামছা—গামছাট একবার দে দিকি মা। একোনাইট তিরিশ শক্তি - বক্সর একেবারে কোণের দিকে— জগদ্ধাত্রী অগ্নিকাণ্ডের ন্যায় জলিয়া উঠিয়া বলিলেন, একোনাইট ঘোচাচ্চি আমি । শ্বশুরের অন্নে জমিদার সাজতে লজ্জ করে না তোমার ? কে বললে বিরাট নাপতেকে স্বদ ছেড়ে দিতে ? কার জায়গায় তুমি হাড়ী-ভুলে এনে বসাও ? কার জমি তুমি গোচর বলে দান করে এসে ? চিরকাল তুমি হাড়-মাস আমার জালিয়ে খেলে ! আজি, হয় আমি চলে যাই, না হয় তুমি আমার বাড়ি থেকে বার হয়ে যাও । সন্ধ্যা তীব্ৰকণ্ঠে কহিল, মা, দুপুরবেলা এ-সব তুমি কি শুরু করলে বল ত ? ম। তেমনিভাবে জবাব দিলেন, এর আবার দুপুর-সকলে কি ? কে ও ? ঠাকুরপূজো সেবে উচুনের ছাই-পাশ দুটে গিলে যেন বাড়ি থেকে দূর হয়ে যায়। আমি অনেকে সয়েচি, আর সইতে পারব না, পারব না, পারব না ! বলিতে বলিতেই তিনি অকস্মাৎ কাদিয়া ফেলিয়া দ্রুতবেগে তাহার ঘরের মধ্যে গিয়া প্রবেশ করিলেন । হ, বলিয়া প্রিয়বাবু একট। দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করিয়া কহিলেন, বললুম তাদের জমিদার বলেহ কি স্বদের এতগুলে। টাকা ছেড়ে দিতে পারি বিরাট ? তোরা বলিস্ কি ? কিন্তু কে কার কথা শোনে ? আর তাদেরই বা দোষ কি ? ওষুধ থাবে ত পথ্যির যোগাড় নেই । নেট্রাম দু’শ শক্তি একটা ফোটা দিয়ে— সন্ধ্যার দুই চক্ষে অশ্র টলটল করতেছিল, সে অলক্ষ্যে আঁচলে মুছিয়া ফেলিয়া বলিল, কেন বাবা তুমি মাকে না জানিয়ে এসব হাঙ্গামার মধ্যে যাও ? আমি ত বলি যাব না—কিন্তু প্রিয় মুখুয্যে ছাড়া যে গায়ে কিছুটি হবার যে নেই, তাও ত দেখতে পাই । কোথায় কার রোগ হয়েচে, কোথায় কার— বক্তব্য সম্পূর্ণ করিতে না দিয়াই সন্ধ্যা চলিয়া গেল এবং তৎক্ষণাৎ শুদ্ধবস্ত্র ও গামছা আনিয়া পিতার হাতে দিয়া কহিল, আর দেরি করো না বাবা, ঠাকুরপুজোটি সেরে ফেলো । আমি আসচি । এই বলিয়া সে তাহার ঘরে চলিয়া গেল এবং প্রিয়বাবুও মাথা মুছিতে মুছিতে বোধ করি বা ঠাকুর-ঘরের উদ্দেশেই প্রস্থান করিলেন । বলিতে বলিতে গেলেন— ইঃ-আবার যে পেটটা কামড়াতে লাগলো! পরাণের নামে—ই— › ግ »