পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ কবিগৃহে আসিয়া যখন পৌঁছান গেল তখন সন্ধ্য। উত্তীর্ণ হইয়াছে। অনুমান করিলাম আকাশে বসন্ত-রাত্রির চাদও উঠিয়াছে। তিধিটা ছিল বোধ করি পূর্ণিমার কাছাকাছি, অতএব আশা করিয়া রহিলাম গভীর নিশীথে চন্দ্রদেব মাথার উপরে আসিলে এ সম্বন্ধে নিসংশয় হওয়া যাইবে গৃহের চারিদিকেই নিবিড় বেণুবন, খুব সম্ভব তাহার কোকিল, দোয়েল ও বুলবুলির দল এর মধ্যেই থাকে এবং অহর্নিশ শিস দিয়া, গান গাহিয়া কবিকে ব্যাকুল করিয়া দেয়। পরিপক্ক অসংখ্য বেণুপত্ররাশি ঝৰিয়া ঝরিয়া উঠান আঙ্গিনা পরিব্যাপ্ত করিয়াছে, দৃষ্টি এই ঝরাপাতার গান গাহিবার প্রেরণায় সমস্ত মন মুহূৰ্ত্তে গর্জন করিয়া উঠে। চাকর আসিয়া বাহিরের ঘর খুলিয়া আলে জালিয়া দিল, গহর তক্তপোশটা দেখাইয়া কছিল, তুই এই ঘরেই থাকবি। দেখি কি রকম হাওয়া । অসম্ভব নয়। দেখিলাম, দখিনা-বায়ে রাজ্যের শুকনা লতাপাত গবাক্ষপথে ভিতরে ঢুকিয়া ঘর ভরিয়াছে, তক্তপোশ ভরিয়াছে, মেঝেতে পা ফেলিতে গা ছমছম করে। খাটের পায়ার কাছে ইদুরে গর্ভ খুড়িয়া একরাশি মাটি তুলিয়াছে, দেখাইয়া বলিলাম, গহর, এ ঘরে কি তোমরা ঢোকো না ? গহুর বলিল, না, দরকারই হয় না । আমি ভেতরই থাকি । কাল সব পরিষ্কার করিয়ে দেব । তা যেন দিলে, কিন্তু গৰ্ত্তটীয় সাপ থাকতে পারে ত ? চাকরটা বলিল, দুটো ছিল, আর নেই। এমন দিনে তারা থাকে না, হাওয়া খেতে বার হয়ে যায় । জিজ্ঞাসা করিলাম, কি করে জানলে মিঞা ? গহর হাসিয়া কহিল, ও মিঞা নয়, আমাদের নবীন । বাবার আমলের লোক । গরুবাছুর, চাষবাস দেখে, বাড়ি আগলায় । আমাদের কোথায় কি আছে না আছে সব জানে । নবীন হিন্দু, বাঙালীও বটে, পৈতৃক কালের লোকও বটে। এই পরিবারের গরুবাছুর চাষবাস হইতে বাড়িঘর দোরের অনেক কিছু জানাও তাহার অসম্ভব নয়, তথাপি সাপের সম্বন্ধে ইহার মুখের কথায় নিশ্চিন্ত হইতে পারিলাম না । ইহাদের বাড়িসুদ্ধ সকলকে দক্ষিণ হাওয়ায় পাইয়া বসিয়াছে । ভাবিলাম হাওয়ার লোভে সর্পযুগলের বহির্গমন আশ্চৰ্য্য নয় মানি, প্রত্যাগমন করিতেই বা কতক্ষণ ? গহুর বুঝিল, আমি বিশেষ ভরসা পাই নাই, কহিল, তুই ত ধাকবি খাটে, তোর ভয়টা কিসের। তা ছাড়া ওঁরা থাকেন না আর কোথায় ? কপালে লেখা থাকলে রাজা পরীক্ষিও নিস্তার পান না—আমরাত তুচ্ছ। নবীন, ঘরট বীট দিয়ে খালের মূখে একটা ইট চাপা দিয়ে দিস। তুলিস্নে । কি খাবি বল ত শ্ৰীকান্ত ?

  • q