পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

السلام যে গোলোক চাটুয্যে মহাশয়ের নামে বাঘ ও গরুতে একত্রে একঘাটে জলপান করে বলিয়া সেদিন রাসমণি বারংবার সন্ধ্যাকে ভয় প্রদর্শন করিয়াছিলেন, সেই হিন্দুকুলচূড়ামণি পরাক্রান্ত ব্যক্তিটি এইমাত্র তাহার বৈঠকখানায় আসিয়া বসিয়াছিলেন । তাহার পরিধানের পট্টবস্ত্র ও শিখাসংলগ্ন টাটকা করবী পুষ্প দেখিয়া মনে হয় অনতিবিলম্বেই তাহার সকালের আহ্নিক ও পূজা সারা হইয়াছে। বাহিরের লোকজন তখনও হাজির হইয়া উঠিতে পারে নাই, ভূত্য ছীকায় নল করিয়া তামাক দিয়া গিয়াছিল, মুডৌল ভুড়িটি তাকিয়ায় ঠেস দিয়া, অন্তমনষ্ক-মুখে তাহাই পান করিবার আয়োজন করিতেছিলেন, এমনি সময়ে অন্দরের কবাটট নড়িয়া উঠার শব্দে চোখ তুলিয়া বলিলেন, কে ? অন্তরাল হইতে সাড়া আসিল, আমি । কিছু না খেয়েই যে বাইরে চলে এলেন বড় ? রাগ হ’লে নাকি ? গোলেীক কহিলেন; রাগ ? না, রাগ-অভিমান আর কার ওপর করব বল ? সে তোমার দিদির সঙ্গে সঙ্গেই গেছে ? বলিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করিয়া বলিলেন, না, এখন আর কিছু খাব না । আজ গোকুল ঠাকুরের তিরোভাব—সেই সন্ধ্যার পরেই একেবারে সন্ধ্যে-আহ্নিক সেবে একটু দুধ-গঙ্গাজল মুখে দেব। এমনি করে যে কটি দিন যায়। বলিয়া আর একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলিয়া ইকার নলটা মুখে দিলেন। যে মেয়েটি নেপথ্য হইতে কথা কহিতেছিল, সে দ্বারটা ঈষৎ উন্মুক্ত করিয়া, ঘরে আর কেহ আছে কিনা দেখিয়া লইয়া, ধীরে ধীরে প্রবেশ করিল। মেয়েটি বিধবা । দেখিতে কুশ নয়, বয়সও বোধ করি চব্বিশ-পচিশের মধ্যেই। পরিধানে মিহি সাদা তি, হাতে কোন অলঙ্কর নাই, কিন্তু গলায় ইষ্টকবচ-বাধা একছড়া মোটা সোনার হার। একটুখানি হাসিয়া কহিল, আপনি, ওই-সব ঠাট্ট করেন, লোকে কি মনে করে বলুন ত? তা ছাড়া আমাকে কি ফিরে যেতে হবে না ? বলিয়া পরক্ষণেই মুখখানি বিষন্ন করিয়া কহিল, যাকে সেবা করতে এলুম তিনি ত ফাকি দিয়ে চলে গেলেন, এখন ফিরে গিয়ে কি বুড়ো শ্বশুর-শাশুড়ীকে আবার দেখতে-শুনতে হবে না ? আপনি বলুন ! গোলোক তামাক টানিতে টানিতে গম্ভীর হইয়া বলিলেন, সে ত বটেই। আমার সংসার অচল বলে ত আর কুটুম্বের মেয়েকে ধরে রাখা যায় না। আর তাই যদি না হবে ঘরের লক্ষ্মীই বা এ-বয়সে ছেড়ে যাবে কেন ? মধুসুদন! বেশ, তাই যাও একটা ভাল দিন দেখিয়ে । বোনের সেবা করতে এসেছিলে, সেবা দেখিয়ে » ፄ: