পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৮৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বামুনের মেয়ে সন্ধ্যা বলিল, না, ভালো আছি ঠাকুর্দা । জগদ্ধাত্রী শুল্কমুখে একটু হাসি আনিয়া বলিলেন, , ভালই বটে । মাস ঘুরতে চলল মামা, রোজ অমুখ, রোজ জর । আজও ত সাৰু খেয়ে রয়েচে । গোলোক কহিলেন, তাই নাকি ? তা হবে না কেন বাছ,—কোথায় আজ ও কাখে-কোলে ছেলে-পুলে নিয়ে ঘরকন্ন করবে, না তোরা ওকে টাঙিয়ে রেখে দিলি ! পাত্রস্থ করবি কবে ? বয়স যে— জগদ্ধাত্রী বয়সের কথাট তাড়াতাড়ি চাপিয়া দিয়া বলিয়া উঠিলেন, কি করব মামা, আমি এক মেয়েমানুষ আর কতদিকে সমলবো ! তোমার জামাই গেরাহি করে না—ডাক্তারি নিয়েই উন্মত্ত,-আমার এমন ধিক্কার হয় মামা, যে সব ছেড়েছুড়ে দিয়ে শাশুড়ীর কাছে কাশীতে পালিয়ে গিয়ে থাকি । তারপরে যার যা কপালে আছে হোক —বলিতে বলিতে র্তাহার কণ্ঠস্বর গদগদ হইয়া উঠিল । গোলোক কহিলেন, পাগলাটা এখন করচে কি ? জগদ্ধাত্রী ললিলেন, তাই একেবারে বদ্ধ পাগল হ’য়ে গেলেও যে বঁচি, ঘরে শিকল দিয়ে ফেলে রেখে দি । এ যে দুয়ের বার - জলিয়ে-পুড়িয়ে, একেবারে থাক করে দিলে ! এই বলিয়া তিনি চোখের কোণটা আঁচলে মুছিয়া ফেলিলেন । গোলোক সহানুভূতির স্বরে বলিলেন, তাই বটে, তাই বটে—আমি অনেক কথাই শুনতে পাই । ত তোরাও ত বাপু ধমুকভাঙ্গা পণ করে আছিস্ স্বয়ং কাৰ্ত্তিক নইলে আর মেয়ের বিয়ে দিবি না। আমাদেব ভারী কুলীনের ঘরে তা কি কখনো হয় ; না, হয়েচে বাছ ? শুনিস্নি, তখনকাব দিনে কত কুলীনকে গঙ্গাযাত্র করেও কুলীনের কুল রক্ষা করতে হতো ? মধুসূদন, তুমিই সত্য ! জগদ্ধাত্রী ক্ষুব্ধ হইয়া বলিলেন, কে তোমাকে বলচে মামা, জামাই আমার ময়ূরে চড়ে না এলে মেয়ে দেব না ? মেয়ে আগে, না কুল আগে ? বংশে কেউ কখনো শৃদ্ধ বলে কায়েতের ধরে পা ধুলে না, আর আমি চাই কাৰ্ত্তিক ! ছোট ঘরে যাব না এই আমার পণ—ত মেয়ে জলে ফেলে দিতে হয় দেব । গোলোক খুশী হইয়া বলিলেন, এই ত কথা! আচ্ছ, আমি দেখচি । যাই যাই করিয়াও সন্ধ্যা নতশিরে আরক্ত-মুখে দাড়াইয়া ছিল । গোলক তাহার প্রতি চাহিয়া সহাস্তে রহস্য করিয়া বলিলেন, কাৰ্ত্তিক যখন চাসনে জগো, তখন মেয়েকে না হয় আমার হাতেই দে না ! সম্পর্কেও বাধবে না, থাকবেও রাজরাণীর মত। কি বলিস্নাতনী—পছন্দ হবে ? অন্য সময়ে সন্ধ্য পরিহাসে যোগ দিতে পারিত, কিন্তু অরুণ হইতে আরম্ভ করিয়৷ পিতার প্রসঙ্গ উঠিয়া পড়া পৰ্য্যস্ত সে ক্রোধে, দুঃখে, লঙ্গায় জ্বলিয়া যাইতেছিল, Ֆա ծ