পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/১৯৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বামুনের মেয়ে প্রিয় ক্ষণকাল বিক্ষিতের মত চাহিয়া থাকিয়৷ জলিয়া উঠিয়া বলিলেন, ওষুধ চাইনে চাল চাই ! দূর হ হারামজাদ আমার স্বমুখ থেকে। ছোটজাতের মুখে আগুন ! দুলেবে লজ্জিত হইয়া চলিয়া যাইবার উপক্ৰম করিতে প্রিয় ধমক দিয়া বলিলেন, খেতে পাসনি ত সন্ধ্যের কাছে বল গে না । দুলেবে শুধু নীরবে মুখ তুলিয়া চাহিল। প্রিয় কহিলেন, গিন্নীর কাছে গিয়ে যেন মরিসনে । ধার্টের ধারে দাড়িয়ে থাক গে, দিদিঠাকরুণ এলে বলিস আমার বড় ওষুধের বাক্সে একটা আট-আনি আছে দিতে । কিন্তু খবরদার বলে দিচ্চি, ব্যামো হলে আগে আমাকে ডাকতে হবে । তখন যে বিপনের কাছে গিয়ে— কে ছে, ত্ৰৈলোক্য নাকি ? ষষ্ঠাচরণ যে ! বলি বাড়ির সব খবর ভাল ত ? দুলেবে অস্তে আস্তে প্রস্থান করিল, ত্ৰৈলোক্য ও ষষ্ঠীচরণ সম্মুখে আসিয়া প্রত: প্রণাম করিয়া কহিল, আঞ্জে হুঁ, আপনার আশীৰ্ব্বাদে খবর সব ভাল । সবাই ভাল আছে । প্রিয় অস্ফুটে আশীৰ্ব্বাদ করিয়া কহিলেন, ভাল, ভাল। যে দিনকাল পড়েচে, আমার ত নাইবার-খাইবার সময় নেই। ঘরে ঘরে সন্দি-কাশি, একটু অবহেলা করেচ কি ব্রঙ্কাইটিস । সকালেই যাওয়া হচ্ছে কোথায় ? ত্ৰৈলোক্য কহিল, আজ্ঞে, আপনারই কাছে । প্রিয় উৎসাহিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, কেন, কেন আমার কাছে কেন ? ত্ৰৈলোক্য কহিল, লোকজনের চলাচলের বড় দুঃখ হচ্চে জামাইবাবু, তাই খালটার ওপরে একটা সঁকো তৈরী করচি। আপনার ওই বৈকুণ্ঠের দরুণ ছোট বাশঝাড়টা না দিলে ত আর কিছু হয় না । প্রিয় রাগ করিয়া বলিলেন, কিন্তু আমি দিতে যাব কেন ? গায়ে কি আর মানুধ নেই ? বুড়ে যষ্ঠীচরণ এতক্ষণ চুপ করিয়া ছিল, এইবার সে ঘাড় নোয়াইয়া আর একট। প্রণাম করিয়া বলিল, যদি অভয় দেন ত বলি জামাইবাবু, এ-গায়ে আপনি ছাড়া আর মানুষ নেই। আপনি দয়া করেন ত দশজনে চলে বাঁচবে, নইলে আমরা চাষী-মানুষ কোথায় পাব বঁাশ কেনবার টাকা ? প্রিয় এক মুহূৰ্ত্ত মৌন থাকিয়া প্রশ্ন করিলেন, লোকজনের কি কষ্ট হচ্ছে নাকি ? ত্ৰৈলোক্য কহিল, মরে যাচ্ছে বাবাঠাকুর, হাত-পা ভেঙে একেবারে মরে যাচ্ছে । প্রিয় কহিলেন, কিন্তু গিল্পী শুনলে যে ভারী রাগ করবে। যষ্ঠীচরণ কহিল, আপনি দিলে মাঠাকরুণ করবেন কি? তখন না-হয় সধাই গিয়ে র্তার পায়ে উপুড় হয়ে পড়ব। ר של