পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ এই এক পাগল ! ইতিপূৰ্ব্বে ইশারায় ইঙ্গিতে বুঝিয়াছিলাম তাহার কাব্যগ্রন্থ সে ছাপাইয়া প্রকাশ করিতে চায়। মনে আশা, সংসারে একটা নূতন সাড়া পড়িবে। সে লেখাপড়া বেশী করে নাই, পাঠশালায় ও স্কুলে সামান্ত একটু বাঙলা ও ইংরাজী শিখিয়াছিল মাত্র। মনও ছিল না, বোধ হয় সময়ও পায় নাই। কবে কোন শৈশবে সে কবিতা ভালোবাসিয়াছে ; হয়ত এ মুগ্ধতা তাহার শিরার রক্তে প্রবহমাল, তারপর জগতের বাকী সবকিছুই তাহার চক্ষে অর্থহীন হইয়া গিয়াছে। নিজের অনেক রচনাই তাহার মুখস্থ, গাড়িতে বসিয়া গুন গুন করিয়া মাঝে মাঝে আবৃত্তি করিতেও ছিল, শুনিয়া তখন মনে করিতে পারি নাই বাগেী তাহার স্বর্ণপদ্মের একটি পাপড়ি খসাইয়াও এই অক্ষম ভক্তটিকে কোনদিন পুরস্কার দিবেন। কিন্তু অক্লাস্ত আরাধনার একাগ্র আত্মনিবেদন এ বেচারার বিরাম নাই, বিশ্রাম নাই । বিছানায় গুইম্বা ভাবিতে লাগিলাম, বারো বৎসর পরে এই দেখা । এই দ্বাদশ-বর্ষ ব্যাপিয়া এ পার্থিব সকল স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়া কথার পরে কথা গাথিয়া শ্লোকের পাহাড় জমা করিয়াছে, কিন্তু এসব কোন কাজে লাগিবে ? কাজেও লাগে নাই জানি। গহর আজ আর নাই। তাহার দুশ্চর তপস্তার অকৃতাৰ্থতা স্মরণ করিয়া মনে আজও দুঃখ পাই । ভাবি, লোকচক্ষুর অন্তরালে শোভাহীন গন্ধহীন কত ফুল ফুটিয়া আপনি শুকায় । বিশ্ববিধানে কোন সার্থকতা যদি লোহার থাকে, গহরের সাধনাও হয়ত वार्थी इङ्ग नझेि । অতি প্রত্যুযেই ডাকাডাকি করিয়া গহর আমার ঘুম ভাঙাইয়া দিল, তখন হয়ত সবে সাতটা বাজিয়াছে, কিংবা বাজেও নাই। তাহার ইচ্ছা বসন্তদিনের বঙ্গের নিতৃত পল্লীর অপরূপ শোভা-সৌন্দর্ঘ্য স্বচক্ষে দেখিয়া ধন্য হই । তাহার ভাবটা এমনি, যেন আমি বিলাত হইতে আসিয়াছি । তাহার আগ্রহ ক্ষ্যাপার মত, অনুরোধ এড়াইবার জো নাই, অতএব হাত-মুখ ধুইয়া প্রস্তুত হইতে হইল। প্রাচীরের গারে আধমরা জামগাছের অৰ্দ্ধেকটায় মাধবী ও অৰ্দ্ধেকটায় মালতী লতা-কবির নিজস্ব পরিকল্পনা । অত্যস্ত নির্জীব চেহারা—তথাপি একটায় গোটা-কয়েক ফুল ফুটিয়াছে, অপরটায় সবে কুঁড়ি ধরিয়াছে। তাহার ইচ্ছা গোটাকয়েক ফুল আমাকে উপহার দেয়, কিন্তু গাছে এত কাটুপি পড়া যে ছোবার জো নাই । সে এই বলিয়া আমাকে সাত্বনা দিল ষে, আর একটু বেলা হইলে আঁকশি দিয়া অনায়াসে পাড়াইয়া দিতে পারিবে । আচ্ছা, চলো । নবীন প্রাতঃক্রিয়ার স্বচ্ছন সুনিৰ্ব্বাহের উদ্যোগপৰ্ব্বে দম ভরিয়া তামাক টানিয়া প্রবলবেগে কাশিতেছিল, থুথু ফেলিয়া ঢোক গিলিয়া অনেকটা সামলাইয়া লইয়া ১২