পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২০২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ জগদ্ধাত্রী তাড়াতাড়ি চোখ দুটি মুছিয়া সাড়া দিলেন, কেন মা ? তাহার ভারী গলার আওয়াজে সন্ধ্যা চমকিয়া মুখ তুলিল, ধীরে ধীরে কাছে আসিয়া জিজ্ঞাসা করিল, কি হয়েছে মা ? জগদ্ধাত্রী কন্যার তীক্ষ্ণদৃষ্টি হইতে মুখ ফিরাইয়া বলিলেন, কিছুই ত হয়নি মা । সন্ধ্য আরও নিকটে আসিয়া নিজের অঞ্চলে মায়ের অশ্রজল সযত্নে মুছাইয়া দিয়া করুণ-কণ্ঠে জিজ্ঞাসা করিল, আবার বাবা কি আজ কিছু করেচেন মা ? জগদ্ধাত্রী শুধু বলিলেন, না । মেয়ে তাহ বিশ্বাস করিল না । আস্তে আস্তে জননীর পাশে বসিয়া কহিল, সংসারে সব জিনিস মামুষের মনের মত হয় না মা ! সবাই ত আমার বাবাকে পাগলা ঠাকুর বলে ডাকে, তুমিও কেন তাকে তাই মনে ভাবে না । জগদ্ধাত্রী কহিলেন, তারা ভাৰতে পারে তাদের কোন লোকসান নেই-কিন্তু আমার মত কাউকে ত জালা পোহাতে হয় না সন্ধ্যে ! এই জালা যে কি এবং তাহার জন্তে কাহাকে যে কোথায় যন্ত্রণা সহ করিতে হয়, ইহা সে কোনদিন ভাবিয়া পাইত না, আজও পাইল না এবং এই তাহার নিরীহ, নির্বিবরোধ পরদুঃখকাতর অল্পবুদ্ধি পিতার দুঃখে তাহার চিত্ত ক্ষেহে ও সমবেদনায় পরিপূর্ণ হইয়া চোখ দুটি ছলছল করিয়া আসিল ; কহিল, আমার যদি সাধ্য থাকত মা, তা হলে বাবাকে নিয়ে আমি বনেজঙ্গলে পাহাড়-পৰ্ব্বতে এমন কোথাও চলে যেতেম, পৃথিবীর কাউকে তার জন্যে আর জালা সইতে ই’তে না । জগদ্ধাত্রী তাহার কন্যার চিবুক হইতে তাড়াতাড়ি হাত দিয়া চুম্বন গ্রহণ করিয়া সক্ষেহে বলিলেন, বালাই ! ষাট ! কিন্তু আমি যেন তোর সংমা। তার অর্ধেকও তুই যদি আমাকে ভালোবাসতিস সদ্ধ্যে। সন্ধ্যা কহিল, তোমাকে কি ভালোবাসিনে মা ? মা বলিলেন, কিন্তু তার কাছে তোর যেন সারা প্রাণটা পড়ে আছে—পায়ে কাকরটি না ফোটে এমনি তোর ভাব । তুই বেশ জনিস তার ওষুধে কিছু হয় না, তৰু তুই প্রাণটা দিতে বসেচিস, কিন্তু আর কারও ওষুধ খাবিনে—পাছে তার লজ্জা হয়। এ-সব কি আমি টের পাইনে সন্ধো ! সন্ধ্য দুই হাতে মায়ের গলা জড়াইয়া ধরিয়া হাসিয়া বলিল, তাহ বই কি ! বাবার মত ডাক্তার কি কোথাও আছে নাকি ! ম৷ বলিলেন, নেই সে কথা সত্যি । সন্ধ্য রাগ করিয়া বলিল, যাও—তোমাকে ঠাট্টা করতে হবে না। মাছুষের অস্থখ বুঝি একদিনেই ভাল হয়ে যায় ? আমি ত আগের চেয়ে ঢের সেরে উঠেচি। >2%