পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত হাত নাড়িয়া নিষেধ করিল। বলিল, বনে-বাদাড়ে মেলাই যাবেন না বলে দিচ্ছি। গহর বিরক্ত হইয়া উঠিল - কেন রে ? নবীন জবাব দিল, গোটা দুৰ্ত্তিন শেয়াল ক্ষেপেচে—গরু-মনিন্তি একসাই কামড়ে বেড়াচ্চে । আমি সভয়ে পিছাইয়া দাড়াইলাম। কোথায় হে নবীন ? কোথায় সে কি দেখে রেখেচি ? অাছেই কোন ঠাই ঝোপেঝাড়ে । স্বান ত একটু চেfথ রেখে চলবেন । তা হলে কাজ নেই ভাই গহুর। বাঃ রে! এই সময়টায় শিয়াল-কুকুর একটু ক্ষ্যাপেই, তা বলে লোকজন রাস্তায় চলবে না নাকি ? বেশ ত । এও দখিন হাওয়ার ব্যাপার । অতএব, প্রকৃতির শোভা দেখিতে সঙ্গে যাইতেই হইল, পথের দু’ধারে আমবাগান। কাছে আসিতেই অগণিত ছোট ছোট পোকা চড়চড় পটপট শবে আম্রমুকুল ছাড়িয়া চোখে নাকে মুখে জামার ভিতরে ঢুকিয়া পড়িল, শুকনা পাতায় আমের মধু ঝরিয়া চটচটে আঠার মত হইয়াছে, সেগুলা জুতার তলায় জড়াইয়া ধরে, অপ্রশস্ত পথের অধিকাংশ বেদখল করিয়া বিরাজিত ঘেটুগাছের কুঞ্জ, মুকুলিত বিকশিত পুষ্পসম্ভারে একান্ত নিবিড়-মনে পড়িয়া গেল নবীনের সতর্কবাণী । গহরের মতে কালটা ক্ষেপিবার উপযোগী । সুতরাং ঘেটুফুলের শোভা সময়মত আর একদিন না হয় উপভোগ করা যাইবে, আজ গহর ও আমি, অর্থাৎ নবীনের গরুমনিস্কি দ্রুতপদেই স্থানত্যাগ করিলাম । বলিয়াছি আমাদেরই গ্রামের নদী ইহাদেরও গ্রামপ্রাস্তে প্রবাহিত । বর্ষায় পরিস্ফীত জলধারা বসন্ত সমাগমে একাস্ত শীর্ণ, সেদিনের শ্রাতশ্চালিত অপরিমেয় পান। ও শৈবাল আজ শুষ্ক তটভূমিতে পড়িয়া শিশির ও রীত্রে পচিয়া সমস্ত স্থানটাকে দুৰ্গদ্ধে নরক্ষকুও করিয়া তুলিয়াছে। পরপারে দূরে কয়েকটা শিমূলগাছে অজস্র রাঙা ফুল ফুটিয়া আছে চোখে পড়িল, কিন্তু তাহার প্রতি দৃষ্ট আকর্ষণ করাটা কবির কাছেও এখন ষেন বাড়াবাড়ি বলিয়া ঠেকিল। বলিল, চল, ঘরে ফিরি। তাই চলো । আমি ভেবেছিলাম তোর এসব ভালো লাগবে । বলিলাম, লাগবে ভাই লাগবে। ভাল ভাল কথা দিয়ে এসব তুমি কবিতা লিখে, পড়ে আমি খুশীই হবে । তাই বোধ হয় গায়ের লোক ফিরেও চায় না। కి