পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বামুনের মেয়ে সামলাইয়া লইয়া হা: হা: হা: করিয়া হাসিয়া কহিলেন, বলেচে না-কি ? উী আচ্ছ। ফাজিল তা ক্রুদ্ধ মৃত্যুঞ্জয় কহিল, হোক ফাজিল, কিন্তু তাই বলে আপনাকে বলবে এই কথা ! জানে না সে আপনার পায়ে মালা দিলে তার ছাপ্পান্ন পুরুষ উদ্ধার হয়ে যাবে ! আপনি বলেন কি ? গোলোক প্রশান্ত হাসিমুখে কহিলেন, ছেলেমান্তষ ! ছেলেমানুষ । রাগ করতে নেই হে মৃত্যুঞ্জয়—বাগ করতে নেই। আমার মর্য্যাদা সে জানবে কি—জানো তোমরা, জানে দশখানা গ্রামের লোক । মৃত্যুঞ্জয় গলাটা কথঞ্চিং সংযত করিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ব্যাপারটা কি তা হলে সত্যি নয় ? আপনি কি তা হলে রামুপিসীকে দিয়ে— গোলোক কহিলেন, রাধামাধব ! তুমিও ক্ষেপলে বাবাজী । যার অমন গৃহলক্ষ্মী যায়, সে নাকি আবার— বলিয়া অকস্মাৎ প্রবল নিশ্বাস মোচন করিয়া কহিলেন, মধুস্থদন ! তুমিই ভরসা ! র্তাহর ভক্তি-গদগদ উচ্ছ্বাসের প্রত্যুত্তরে মৃত্যুঞ্জয় কি বলিবে ভাবিয়া না পাইয়া শুধু তাহার মুখের প্রতি চাহিয়া রহিল। গোলোক কয়েক মুহূৰ্ত্ত পরে উদাসকণ্ঠে কহিতে লাগিলেন, ছাই-পাশ মনেও পড়ে না কিছু—লোকজনেরা ত দিবারাত্রি খেয়ে ফেললে আমাকে—একে বাঁচান, ওঁকে রক্ষা করুন, অমুকের কুল উদ্ধার করুন,-আমাকে ত জানে, চিরকাল অন্যমনস্ক উদাসীন লোক—হয়ত বা মনের ভুলে কাউকে কিছু বলেও থাকব—মধুসূদন ! তুমিই ভরসা ! তুমিই গতি মুক্তি ! ঘটক মৃত্যুঞ্জয় পাইয়া বসিল । সবিনয়ে কহিল, আজ্ঞে তাই যদি হয়, আমাদের প্রাণকৃষ্ণ মুখুয্যের মেয়েটিকে আপনার পায়ে স্থান দিতেই হবে । ব্রাহ্মণ গরীব, মেয়েটির বয়সও তের-চোদ হলো-কিন্তু যেমন লক্ষ্মী, তেমনি স্বরূপা । গোলোক বলিলেন, তুমি পাগল হলে মৃত্যুঞ্জয় ! আমার ওসব সাজে, না ভাল লাগে ? তা মেয়েটি বুঝি এরই মধ্যে বছর-চোদ হলো ? বেশ একটু বাড়ন্ত গড়ন বলেই শুনেচি, না ? মৃত্যুঞ্জয় উৎসাহিত হইয়া কহিল, আজ্ঞা হা, খুব খুব । তা ছাড়া যেমন শাস্ত, তেমনি স্বন্দরী । - গোলোক মৃদু মৃদু হাস্ত করিয়া কহিলেন, হাঃ । আমার আবার সুন্দরী ! আমার আবার স্বরূপা ! যে লক্ষ্মীর প্রতিমে হারালাম ! মধুসুদন | কারও দুঃখই সইতে পারিনে, শুনলে দুঃখই হয় । তেরো-চোদ যখন বলেচে তখন পনের-ষোল হবে। ব্রাহ্মণ বড় বিপদেই পড়েচে বল ?