পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বামুনের মেয়ে ইকো-নাপতে বদ্ধ করে দিয়েছিলাম—ভায়াকে শেষে বাপ, বাপ করে ছিন্নভিন্ন হরে গ৷ ছেড়ে পালাতে হ’লো, সে ত তোমার পিতামহের সাহায্যেই। কিন্তু তোমরা বাবা র্তার কীৰ্ত্তি বজায় রাখতে পারলে না, এ-কথা আমাকে বলতেই হবে। মৃত্যুঞ্জয় তাহার পূর্বপুরুষের তুলনায় নিজের হীনতা উপলব্ধি করিয়া অত্যন্ত লজ্জিত হইল। কহিল, আপনি দেখবেন চাটুযোমশাই, আমি একটি হস্তার মধ্যেই তাদের পেটের খবর টেনে বার করে আনব । গোলোক উৎসাহ দিয়া বলিলেন, তা তুমি পারবে, পারবে। কত বড় বংশের ছেলে । কিন্তু দেখ বাবাজী, এ নিয়ে এখন আর পাচ-কান করবার আবশ্বক নেই। কথাটা তোমার আমার মধ্যেই গোপনে থাক্‌ ; সমাজের মান-মৰ্য্যাদা বৃক্ষ করতে হলে অনেক বিবেচনার প্রয়োজন । তা স্থাখো, কেবল মুদ কেন, তোমার আসল টাকাটাও আমি বিবেচনা করে দেখব । কষ্টে পড়েচ, এ-কথা যদি আগে জানাতে— মৃত্যুঞ্জয় পুলকিত হইয়া উঠিয়া দাড়াইয়া কহিল, যে আজ্ঞে, যে আঞ্জে,—আমরা আপনার চরণেই ত পড়ে আছি। আমি কালই এর সন্ধানে যাব, বলিয়া সে গমনোন্তত হইল । গোলোক জিভ কাটিয়া কহিলেন, আমন কথা মুখেও এনে না বাবাজী । আমি নিমিত্তমাত্র—তার শ্ৰীচরণে কীটাণুকীটের ন্যায় পড়ে আছি। এই বলিয়া তিনি উপরের দিকে শিবনেত্র করিয়া হাতজোড় করিয়া নমস্কার করিলেন । মৃত্যুঞ্জয় চলিয়া যাইতেছিল, অন্যমনস্ক গোলোক সহসা কহিলেন, আর স্থাখে, প্রাণকৃষ্ণকে একবার পাঠিয়ে দিতে যেন ভুলো না । ব্রাহ্মণের বিপদের কথা শুনে পৰ্য্যস্ত প্রাণটা কেঁদে কেঁদে উঠচে । নারায়ণ ! মধুসূদন ! তুমিই ভরসা ! ృ6 প্রসিদ্ধ জয়রাম মুখোর দৌহিত্র শ্ৰীমান বীরচন্দ্র বন্দ্যোর সহিতই সন্ধ্যার বিবাহ স্থর হইয়া গেছে। আগামীকল্য বরপক্ষ আশীৰ্ব্বাদ করিতে আসিবেন, বাড়িতে তাহার উদ্যোগ-আয়োজন চলিতেছে। অগ্রহায়ণের শেষাশেষি বিবাহ, একটিমাত্র দিন আছে, তাহার পরে দীর্ঘদিনব্যাপী অকাল। এ স্থত্রে বহু বৎসর পরে বহু সাধ্যসাধনায় শাশুড়ী কাশী হইতে আসিয়াছেন। সন্ধ্যার পরে ভাড়ার-ঘরের দাওয়ায় বসিয়া প্রদীপের আলোতে জগদ্ধাত্রী মিষ্টান্ন রচনা করিতেছিলেন এবং উহারই অদূরে কালের আসনে বসিয়া বৃদ্ধ শাশুড়ী কালীতারা মালা জপ করিতেছিলেন।