পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ শীতের আভাস দিয়াছে, তাহার গায়ে একখানি গেরুয়া রঙের লুই, পরিধানে সেই রঙে রঞ্জিত বস্ত্র ; পুত্রবধুর দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া শান্তস্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন, বিয়ের বুঝি আর দিন-দশেক বাকী রইল বোমা ? জগদ্ধাত্রী মুখ তুলিয়া চাহিলেন ; কহিলেন, কোথায় দশ দিন মা ? এই আজ নিয়ে ন দিন। কাজটা হয়ে গেলি যেন বাচি । এ পোড়া দেশে কিছুই যেন না হলে আর ভরসা হয় না । শাশুড়ী একটু হাসিয়া কহিলেন, সব দেশেই ভয় মা, কেবল তোমাদের গ্রামেই নয়। কিন্তু এতে আশা-ভরসাই বা কি আছে বোমা, অমন লক্ষ্মীর প্রতিমা মেয়েকে যখন জলে ফেলেই দিচ্চ । জগদ্ধাত্রী চুপ করিয়া কাজ করিতে লাগিলেন, উত্তর দিলেন না। শাশুড়ী বলিলেন, প্রিয়র কাছে সমস্তই শুনেচি । আজ সকালে স্নানের পথে অরুণকেও দেখলাম। এমন সোনার চাদ ছেলেকে তোমার পছন্দ হলো না বোমা ? জগদ্ধাত্রী বিশেষ খুশী হইলেন না, বলিলেন, কিন্তু কেবল পছন্দই ত সব নয় মা ? শাশুড়ী বলিলেন, নয় মানি ; কিন্তু ফিরে এসে সন্ধ্যার কাছে তার কথা পেড়ে একটু একটু করে যতটুকু পেলাম তাতেই যেন দুঃখে আমার বুক ফাটতে লাগল। ই বেীমা, মা হয়েও কি এ তোমার চোখে পড়ল না ? চোখে তাহীর পছদিন পড়িয়াছে, কিন্তু স্বীকার করা যে একেবারে অসম্ভব । বরঞ্চ সভয়ে এদিকে-ওদিকে চাহিয়া চাপ-গলায় বলিলেন, কাজ-কৰ্ম্মের বাড়ি, কেউ যদি এসে পড়ে ত শুনতে পাবে, মা । শাশুড়ী আর কিছুই বলিলেন না, কিন্তু জগদ্ধাত্রী নিজের কণ্ঠস্বরের রুক্ষতায় নিজেই লজ্জিত হইয়া আস্তে আস্তে বলিলেন, আচ্ছ মা, তুমি কি করে এমন কথা বল ? তোমার এত বড় কুলের মৰ্য্যাদা ভাসিয়ে দিয়ে কি করে লোকের কাছে মুখ দেখাবে বল ত ? তা ছাড়া, তার ত জাতও নাই। যাত্বা তার হয়ে তোমার কাছে ওকালতি করেচে, এ কথাটা কি তোমাকে তারা বলেচে ? জগদ্ধাত্রী মনে করিলেন, ইহার পরে আর কাহারও বলিবার কিছু থাকিতেই পারে না ; কিন্তু শাশুড়ী ঘাড় নাড়িয়া কহিলেন, বলেচে বই-কি । কিন্তু তার কিছুই যায়নি বৌম, সমস্তই বজায় আছে। কেবল তার বিদ্যা-বুদ্ধির জন্তেই বলচিনে। ছোট জাত বলে যে অনাথ! মেয়ে দুটোকে তোমরা তাড়িয়ে দিলে, সে তাদেরই বুকে তুলে নিলে । তার জাত ভগবানের বরে অমর হয়ে গেছে ; বেীমা, তাকে আর মাত্ষ মারতে পারে না । জগদ্ধাত্রী মনে মনে কুপিত হইয়া বলিলেন, অনাথা বলেই কি হাড়ি-চুলে হয়ে বামুনের ভিটে-বাড়িতে বাস করবে মা ? এই কি শাস্তরে বলে ? SR sbr