পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বামুনের মেয়ে শাশুড়ী বলিলেন, শাস্তরে কি বলে তা ঠিক জানিনে বৌমা । কিন্তু নিজের ব্যথা যে কত তা ত ঠিক জানি। আমার কথা কাউকে বলবার নয়, কিন্তু এ ব্যথা যদি পেতে, ত বুঝতে বোমা, ছোটজাত বলে মানুষকে ঘৃণা করার শাস্তি ভগবান প্রতি নিয়ত কোথা দিয়ে দিচ্চেন । এই যে কুলের মর্য্যাদা, এ যে কত বড় পাপ, কত বড় ফকির বোঝা, এ যদি টের পেতে ত নিজের মেয়েটাকে এমন করে বলি দিতে পারতে না। জাত আর কুলই সত্যি, আর দুটো মানুষের সমস্ত জীবনের মুখ-দুঃখ কি এত বড়ই মিথ্যে মা ? জগদ্ধাত্রী ক্ষুব্ধ হইয়া কহিলেন, তা হলে কি এই মিথ্যে নিয়েই পৃথিবী চলচে মা ? শাশুড়ী একটু মান হাসিয়া কহিলেন, পৃথিবী ত চলে না বেীমা, চলে কেবল আমাদের অভিশপ্ত জাতের । আমি বিদেশে থাকি, অনেক বয়স হ’লো, অনেক দেখলাম, অনেক দুঃখ পেলাম-আমি জানি যাকে বংশের মর্য্যাদা বলে ভাবচ, যথার্থ সে কি । কিন্তু কথাটা তোমাকে খুলে বলতেও পারব না, হয়ত বুঝতেও তুমি পারবে না। তবুও এই কথাটা আমার মনে রেখে মা, মিথ্যাকে মর্য্যাদা দিয়ে যত উচু করে রাখবে তার মধ্যে তত স্নানি, তত পঙ্ক, তত অনাচার জমা হয়ে উঠতে থাকবে । উঠচেও তাই । জগদ্ধাত্রী কি একটা উত্তর দিতে যাইতেছিলেন, কিন্তু মেয়েকে আসিতে দেখিয়া চুপ করিয়া গেলেন। সন্ধ্যা খিড়কির বাগানে এতক্ষণ তাহার ফুলগাছে জল দিতেছিল, বাড়িতে প্রবেশ করিয়া হাতের ঘটিটা প্রাঙ্গণের চাতালের উপর রাখিয়া দিয়া স্বমুখে আসিয়া দাড়াইল । মায়ের প্রতি চাহিয়া কহিল, ও-কি মা ? চন্দ্রপুপি বুঝি ? বলিয়াই হঠাৎ পিতামহীর দিকে ফিরিয়া জিজ্ঞাসা করিল, ই ঠাকুরমা, সঙ্কলের নাডু আছে, আমাদের নাই কেন ? কালীতারা সমেহে হাসিয়া বলিলেন, তা ত আমি জানিনে দিদি । সন্ধ্যা কহিল, বা:–তোমার শাশুড়ীকে বুঝি এ কথা জিজ্ঞেস করোনি । কালীতারা বলিলেন, কি করে আর জিজ্ঞেস করব ভাই, জন্মে ত কোনদিন শ্বশুরবাড়ির মুখ দেখিনি । জগদ্ধাত্রী ইহা জানিতেন, তিনি লজ্জিত-মুখে নীরবে কাজ করিতে লাগিলেন। সন্ধ্যা প্রশ্ন করিল, আচ্ছা ঠাকুরমা, তোমার সবমূদ্ধ কতগুলি সতীন ছিল ? একশ’ ? দুশ ? তিনশ' ? চারশ’ ? ঠাকুরমা পুনরায় হাসিলেন–ঠিক জানিনে দিদি, কিন্তু অসম্ভবও নয়। আমার বিয়ে হয়েছিল আট বছর বয়সে, তখনই তার পরিবার ছিল ছিয়াশিটি। তারপরেও অনেক ৰিয়ে করেছিলেন, কিন্তু সে বোধ হয় তিনি নিজেও জানতেন না, তা আমি জানব কি করে ? ३५-२१