পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২১৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বামুনের মেয়ে বিচার করে নিতে হয়। যে মমতায় চোখ বুজে থাকতে চায় সে-ই মরে। আমার সকল কথা কাউকে বলবার নয় ভাই, কিন্তু এ নিয়ে সমস্ত জীবনটাই নাকি আমাকে অহরহ বিষের জালা সইতে হয়েছে। বলিতে বলিতে র্ত্যহার গলা যেন ভিতরে অব্যক্ত যাতনায় বুজিয়া আসিল । সন্ধ্যা তাহার হাতখানি নিজের হাতের মধ্যে লইয়া আস্তে আস্তে বলিল, থাক গে ঠাকুরমা এ-সব কথা । তিনি অন্ত হাত দিয়া পৌত্রীকে বুকের কাছে টানিয়া লইয়া নীরবে আপনাকে আপনি একমুহূর্তে সংবরণ করিয়া ফেলিলেন, তারপর সহজকণ্ঠে ধীরে ধীরে বলিতে লাগিলেন, সন্ধ্যা, দেশের রাজা একদিন শুধু গুণের সমষ্টি ধরেই ব্রাহ্মণকে কৌলীন্যমধ্যাদা দিয়ে শ্রেণীবদ্ধ করেছিলেন, তারপবে আবার এমন ছুদিনও এসেছিল যেদিন এই দেশেরই রাজার আদেশে তাদেরই বংশধরদের কেবল দোষের সংখ্যা গণনা করেই মেলবদ্ধ করা হয়েছিল । যে সম্মানের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল, ক্রটি এবং অনাচারের উপর তার ভিতরের মিথ্যেটা যদি জানতে দিদি, তা হলে আজ যে বস্তু তোমাদের এত মৃদ্ধ করে রেখেচে, শুধু কেবল সেই কুল নয়—ছোট-জাত বঙ্গে যে ছলে-মেয়ে দুটোকে তোমরা তাড়িয়ে দিলে, তাদেরও ছোটো বলতে তোমাদের লজ্জায় মাখ ষ্ট্রেট হ'তো । জগদ্ধাত্রী ক্রোধ এবং বিরক্তি আর সহ করিতে না পারিয়া উঠিয়া চলিয়া গেলেন, কিন্তু সন্ধ্যা চুপ করিয়া সেইখানেই বসিয়া রহিল। তাহার মনে হইতে লাগিল, তাহার সত্যবাদিনী সন্ন্যাসিনী পিতামহী ভিতরের কি একটা অত্যন্ত লজ্জা ও ব্যথার ইতিহাস কিছুতেই প্রকাশ করিতে পারিতেছেন না, কিন্তু তাহার বুক ফাটিতেছে। তাহার হঠাৎ মনে হইল, তাহার পিতামহের বহুবিবাহের সহিত ইহার কি যেন একটা ঘনিষ্ঠ সংস্রব আছে । খানিকক্ষণ নিঃশব্দে থাকিয়া সে সলজে চুপি চুপি জিজ্ঞাসা করিল, সত্যিই কি ঠাকুরমা, আমাদের মধ্যে খুব বেশি অনাচার প্রবেশ করেচে ? যা নিয়ে আমরা এত গল্প করি তার কি অনেকখানি ভুয়ো ? পিতামহী কহিলেন, এর যে কতখানি ভুয়ো সে যে আমার চেয়ে কেউ বেশি জানে না ! কিন্তু কথাটা উচ্চারণ করিতেও যে তার চোখে জল আসিয়া পড়িল তাহা সন্ধ্যার অন্ধকারেও সন্ধ্যার অবিদিত রহিল না । তিনি হাত দিয়। চোখ দুটি মুছিয়া ফেলিয়া ধীরে ধীরে বললেন, কিন্তু এখন আমি মাঝে মাঝে কি মনে করি জানস সন্ধ্যা । মানুষে মান্বযে ব্যবধানের এই যে মানুষের হাতেগড় গণ্ডি, এ কখনো ভগবানের নিয়ম নয় । তার প্রকাগু মিলনের মুক্ত সিংহদ্বারে মানুষে যতই কাটার উপর কাট চাপায়, ততই গোপন গহ্বরে তার অত্যাচারের বেড়া অনাচারে ቖእኔ »