পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২২৩

বামুনের মেয়ে এসেছিল বুঝি ? কি বললে সে ? কৈ, দেখি কি ওষুধ দিয়ে গেল ? রাসমণির মুখে সত্য-মিথ্যা, উগ্র-কোমল, ভাল-মন্দ কিছুই বাধে না, ভূমিকা করিয়া কথা কহিবার প্রয়োজন তাহার দৈবাৎ ঘটে—কিন্তু তবুও—তাহাকে আজ সাবধান হইতে হইল । মাথা নাড়িয়া বলিলেন, না বাবা, বিপিন ডাক্তারকে ডাক হয়নি, পরাণ চাটুধ্যেও আসেনি—তোমার কাছে কি আবার তারা ? ডাক্তারির তারা জানে কি ? এ কথা চাটুয্যেদাদা যে সকলের কাছে বলে বেড়ায় । বলবে না ? এ যে সবাই বলবে । বিপনেকে যে আমি দশ বচ্ছর শেখাতে পারি। সেবার পলসেটিলা দিয়ে— মালী বলিলেন, তা ছাড়া ছুড়ী এমন কাণ্ড করে বসল বাবা যে, আপনার লোক ছাড়া পরকে ডাকবার পর্য্যস্ত জো নেই । প্রিয় উত্তপ্ত হইয়া কহিলেন, আমি থাকতে পর ঢুকবে এখানে ডাক্তারি করতে ! তবে কি জানো মাসী, এ-সব রোগে একটু টাইম লাগে–কিন্তু তাও বলে যাচ্ছি, দুটির বেশি তিনটি রেমিডি আমি দেব না। কেমন জ্ঞানদা, গা-বমিট আমার দুটি ফোটা ওষুধে থামল কিনা ? ঠিক বল ? জ্ঞানদার আনত-শির একেবারে যেন মাটির সঙ্গে মিশিয়া যাইতে চাহিল । তাহার হইয় রাসমণি বলিলেন, তোমাকে ছাড়া ও অfর কাউকে বিশ্বাস করে না বাবা, তোমার ওষুধ যেন ওর ধন্বন্তরী । কিন্তু ব্যামোটা যে তা নয়, পিওনাথ । আদিষ্টের ফেরে পোড়া-কপালীর অসুখটা যে হয়ে দাড়িয়েচে উণ্টে । প্রিয় হাতটা তুলিয়া কহিলেন, উণ্টে নয় মাসী, উণ্টে নয়। বিপনে মিত্তিরের হাত পড়লে তাই হয়ে দাড়ায় বটে ; কিন্তু কিছু ভয় নেই, এ প্রিয় মুখুয্যে । রাসমণি ললাটে একটুখানি করাঘাত করিয়া বলিলেন, তুমি বঁাচাও ত ভয় নেই সত্যি, কিন্তু সৰ্ব্বনাশী যে এদিকে সৰ্ব্বনাশ করে বসেচে। এখন তার মত একটু ওষুধ দিয়ে উদ্ধার না করলে যে কুলে কালি পড়বার জো হ’লো বাবা । কিন্তু এত অভিজ্ঞ চিকিৎসকের কাছেও তাহার শেষ কথাটা যে বেশ প্রাঞ্জল হইয়া উঠিল না, তাহার মুখের পানে চাহিয়া মাসী চক্ষের নিমিষে অনুভব করিলেন এবং ইহাই যথেষ্ট পরিস্ফুট করিতে প্রিয়নাথকে তিনি ঘরের একধারে টানিয়া লইয়। গিয়া কানে কানে গুটিকয়েক কথা বলিতেই সে চমকাইয়া উঠিয়া কহিল, বল কি মাসী ? জ্ঞানদা— ? মাসী কহিলেন, কি আর বলব বাবা, কপালের লেখা কে খণ্ডবে বল ? এখন দাও একটু ওষুধ পিওনাথ, যাতে গোলোক চাটুয্যের উচু মাথা না নীচু হয় ! একটা দেশের মাধ, সমাজের শিরোমণি । পুরুষমাচুৰ-তার দোষ কি বাবা ? কিন্তু তার ঘরে এসে তুই ছড়ি কি চলাচলিটা করলি বল দিকি ! ఫి: t