পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১২ আজ সমস্তদিন ধরিয়াই কাছে ও দূর হইতে সানাইয়ের করুণ স্বর মাঝে মাঝে ভাসিয়া আসিতেছিল। অড্রাণের আজিকার দিনটি ছাড়া অনেকদিন পর্য্যন্ত বিবাহের দিন নাই ; তাই বোধ হয় এই ছোট গ্রামখানির মধ্যেই প্রায় চার-পাচটা বাড়িতে শুভ-বিবাহের আয়োজন চলিয়াছে ! আজি সন্ধ্যার বিবাহ । নানা কারণে অরুণ এখনো পৰ্য্যন্ত বাসস্থান ও জন্মভূমি পরিত্যাগ করিবার সঙ্কল্প কার্ঘ্যে পরিণত করিয়া তুলিতে পারে নাই। পূর্বের মত আবার সে কাজকৰ্ম্মও শুরু করিয়াছে—বাহির হইতে জীবনে তাহার কোন পরিবর্তনও দেখা যায় না, কিন্তু একটু লক্ষ্য করিয়া দেখিলেই দেখা যাইতে পারিত যে, দেশের প্রতি মমতাবোধটা তাহার যেন একেবারে অন্তৰ্হিত হইয়া গিয়াছে। যে-সকল হিতকর অনুষ্ঠানের সহিত তাহার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সংস্রব ছিল, তাহারা যেন তেমনি দূরে সরিয়া গিয়াছে। গ্রামে সে একঘরে, এতগুলো বিবাহবাটীর কোনটা হইতেই তাহার নিমন্ত্রণ ছিল না— সামাজিকতা রাখিতে তাহার কোথাও যাইবার নাই—আজ সকল বাটীর দরজাই তাহার কাছে রুদ্ধ । সন্ধ্যার পর হইতে তাহার দোতলায় পড়িবার ঘরটিতে সে চুপ করিয়া বসয়ছিল। শীতের হাওয়া বহিতেছে, কিন্তু তবুও ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করা হয় নাই— সব কয়টাই খোলা খ খ করিতেছিল। নিৰ্ম্মেঘ নিৰ্ম্মল আকাশের একপ্রান্ত হইতে অন্য প্রান্ত পৰ্য্যন্ত ত্রয়োদশীর চাদের আলোয় ভাসিয়া যাইতেছে—তাহারই একটুকরা পিছনের মুক্ত বাতায়নের ভিতর দিয়া আসিয়া তাহার পায়ের কাছে ছড়াইয়া পড়িয়াছে। তাহার সম্মুখের খোলা বারান্দার অদূরে একটা ছোট নারিকেল বৃক্ষের মাথার উপর পাতায়-পাতায় জ্যোৎস্নার আলোক পড়িয়া ঝকঝক করিতেছিল, সে তাহার প্রতি আৰ্দ্ধ-জাগ্ৰত অৰ্দ্ধ-নিব্রাতুরের ন্যায় চাহিয়া কি যে ভাবিতেছিল তাহার কোন ঠিকানা ছিল না । পাচক আহারের কথা জিজ্ঞাসা করিতে আসিলে ক্ষুধা নাই বলিয়া তাকে বিদায় করিয়া দিল এবং দেওয়ালে একটা অন্ধকার স্থান হইতে ঘড়িতে এগারটা বাজিয়া তাহার শোবার সময়টা নির্দেশ করিয়া দেওয়া সত্ত্বেও আজ তাহার নড়িবার ইচ্ছাই হইল না, যেমন ছিল, তেমনি নিঃশবে স্থির হইয়া বসিয়া রহিল । হঠাৎ তাহার কানে সদর দরজায় করাঘাতের আওয়াজ এবং পরক্ষণে তাহ খোলার শব্দও শুনিতে পাইল । একবার ইচ্ছা করিল ডাকিয় হেতু জিজ্ঞাসা করে, কারণ পল্লীগ্রামে এত রাত্রে সহজে কেহ কাহারও বাটতে যায় না, কিন্তু উদ্যমের অভাবে প্রশ্ন করা হইল না । ቖ »ሆ