পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বামুনের মেয়ে অরুণ বলিয়া উঠিল, এ সমস্ত তুমি কি বকে যাচ্ছ সন্ধ্যা ? কিন্তু সন্ধ্যা বোধ করি এ প্রশ্ন শুনতেই পাইল না—নিজের কথার সূত্র ধরিয়া বলিতে লাগিল, মৃত্যুঞ্জয় ঘটক গঙ্গাজলের ঘটটা ঠাকুরমার সামনে বসিয়ে দিয়ে জিজ্ঞাসা করলে, বলুন সত্যি কিনা ? বলুন ও কার ছেলে ? মুকুন্দ মুখুয্যের, না হীরু নাপিতের ? বলুন ? অরুণদা ? আমার সন্ন্যাসিনী ঠাকুরমা মাথা হেঁট করে রইলেন, কিছুতেই মিথ্যা বলতে পারলেন না । ওগো ! এ সত্যি, এ সত্যি, এ ভয়ঙ্কর সত্যি ! সত্যিই আমাদের তোমরা যা বলে জানতে তা আমরা নই। তোমার সন্ধ্যা বামুনের মেয়ে নয় ! অরুণের মনের মধ্যে সংশয়ের আর লেশমাত্র অবকাশ রহিল না, শুধু বজ্রাহতের ন্যায় স্তব্ধ হইয়া দাড়াইয়া রহিল । সন্ধ্যা কহিল, একজন তখন সমস্ত ঘটনা খুলে বললে, সে তাদের গ্রামের লোক । বললে, আট বছর বয়সে ঠাকুরমার বিয়ে হয়, তারপরে চোদ-পনর বছর পরে একজন এসে জামাই বলে, মুকুন্দ মুখুয্যে বলে পরিচয় দিয়ে বাড়ি ঢোকে। পাচ টাকা আর একখানা কাপড় নিয়ে সে দুদিন বাস করে চলে যায় –ও—তগবান । অরুণ তেমনি নিৰ্ব্বাক নিশ্চল হইয়া রহিল । সন্ধ্যা কহল, কি বলছিলাম অরুণদা ? ই, হ!—মনে পড়েচে । তারপর থেকে লোকটা প্রায়ই আসত। ঠাকুরমা বড় সুন্দরী ছিলেন—আর সে টাকা নিত না । তারপরে একদিন যখন সে হঠাৎ ধরা পড়ে গেল, তখন বাবা জন্মেছেন । উঃ– আমি মা হলে গল টিপে মেরে ফেলতাম, বড় হতে দিতাম না –কি रुळछिळांभ ? অরুণ অফুট স্বরে বলিল, লোকটা ধরা পড়ে গেল । সন্ধ্য বলিল, ই ই, তাই। ধরা পড়ে গেল। তখন সে কি কথা স্বীকার করলে জানো ? বললে, এ কুকাজ সে নিজের ইচ্ছেয় করেনি, তার মনিব মুকুন্দ মুখুয্যের আদেশেই করেচে। একে বুড়োমাহুষ, তাতে পাচ-সাত বছর থেকে বাতে পঙ্গু, তাই অপরিচিত স্ত্রীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের ভার তার উপরে দিয়ে বলেছিলেন, হিরু, তুই বামুনের পরিচয় মুখস্থ কর্, একটা পৈতে তৈরি করে রাখ, এখন থেকে যা-কিছু রোজগার করে আনবি তার অৰ্দ্ধেক ভাগ পাৰি । অরুণ চমকিয়া বলিল, এ কাজ সে আরও করেছিল নাকি ? সন্ধ্যা কহিল, ই, আরও দশ-বারো জায়গা থেকে সে এমনি করে প্রভুর জন্যে রোজগার করে নিয়ে যেত। সে আরও কি বলেছিল জানো ? বলেছিল, এ কাজ নূতনও নয়, আর তার মনিবই কেবল একলা করে না—এমন অনেক ব্রাহ্মণই ३ ३ >