পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বামুনের মেয়ে গিয়া এতক্ষণে তাহার নিজের প্রতি দৃষ্টি পড়িল । অকস্মাৎ শিহরিয়া উঠিয়া কছিল, ভগবান! এই রাঙা চেলি, এই গায়ের গহনা, এই আমার কপালের কনে-চন্দন-- এসব পরবার সময়ে এ-কথা কে ভেবেছিল ! বলিতে গিয়া তাহার কণ্ঠ ভাঙিয়া আসিল, সেই ভাঙা গলায় বলিল, আমি বিদায় হ’লাম অরুণদা—বলিয়া আর একবার প্রণাম করিয়া নীরবে বাহির হইয়া গেল । অরুণ নিশ্চল হইয়া দাড়াইয়া রহিল। কিন্তু দৃষ্টির বাহিরে সন্ধ্যা অন্তৰ্হিত হইতেই হঠাৎ যেন তাহার চমক ভাঙিয়া গেল-ব্যগ্র-আকুলকণ্ঠে চাকরটাকে বার বার ডাক দিয়া বলিতে লাগিল, শিবু, যা যা, সঙ্গে যা ! বলিতে বলিতে সে নিজেই চুটিয়া তাহার অনুসরণ করিল। SO বঁ হাতে প্রদীপ লইয়া মুখুয্যে কি কয়েকটি বস্তু বাক্স হইতে বাছিয়া বাছিয়া একটুকরা কাপড়ে রাখিতেছিলেন, হঠাৎ পিছনে ডাক শুনিল, বাবা ? কাজটা প্রিয় গোপনেই করিতেছিলেন, শশব্যস্তে হাতের প্রদীপট রাখিয়া দিয়া দাড়াইয়া উঠিয়া সাড়া দিলেন, কে, সন্ধ্যা ? এই যে মা, যাই চল, আর দেরী হবে না— সন্ধ্যা কষ্টে অশ্র সংবরণ করিয়া কহিল, কি করছিলে বাবা ? প্রিয় থতমত খাইয়া বলিলেন, আমি ? কই না—কিছুই ত নয় মা ! সেই বস্ত্রখণ্ডটা দেখাইয়া সন্ধ্যা জিজ্ঞাসা করিল, ওতে কি বাবা ? কি রাখছিলে ? ধরা পড়িয়া প্রিয় অত্যন্ত লজ্জিত হইয়া উঠিলেন ; কতকটা মিনতির মুরে কহিলেন, গোটা-কতক—বেশী নয় মা, রেমিডি সঙ্গে নিচ্ছিলাম—আর ঐ মেটিরিয়া-মেডিকাখানা—বড়ট নয়, ছোটটা—ছিড়ে-খুঁড়েও গেছে—অচেনা জায়গা—যা হোক একটু প্র্যাকটিস করতে হবে ত ? তাই ভাবলাম— মা কি তোমাকে এটুকুও দিতে চায় না বাবা ? প্রিয় অনিশ্চিতভাবে মাথা নাড়িয়া কি যে জানাইলেন, ঠিক বুঝা গেল না। তুমি কোথায় প্র্যাক্টস করবে বাবা ? বৃন্দাবনে। সেখানে কত যাত্রী যায়-আসে—তাদের ওষুধ দিলে কি মাসে চারপাচ টাকাও পাব না সন্ধ্যে ? তা হলেই ত আমার বেশ চলে যাবে ! খুব পাবে বাবা, তুমি আরও ঢের বেশী পাবে। সেখানে ত তুমি কাউকে জানো না ? পরশু শেষরাত্রে ঠাকুরমা যখন কাশী চলে গেলেন, তুমি কেন তার সঙ্গে গেলে না বাবা ? ૨૨૭