পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তোমাকে বলিনি দিদি, তুমি চুপ কর, বলিয়া হরিচরণের বিছানার অত্যন্ত সন্নিকটে সরিয়া আসিয়া বলিল, তোকে জিজ্ঞেস কচ্চি, ওষুধ দিয়েছিলি ? তিনি ঘরে ঢুকিবার পূর্বেই হরিচরণ জড়সড় হইয়া উঠিয়া বসিয়াছিল, ভীতকণ্ঠে বলিল, মা খেতে চান না যে ! শৈলজা ধমক দিয়া উঠিল, ফের কথা কাটে ! তুই দিয়েছিলি কি না, তাই বল ? খুড়ীর কঠোর শাসন হইতে ছেলেকে উদ্ধার করিবার জন্য সিদ্ধেশ্বরী উদ্বিগ্ন হইয়া উঠিয়া বসিয়া বলিলেন, কেন তুই এত রাত্তিরে হাঙ্গামা করতে এলি বল ত শৈল! ওরে ও হরিচরণ, দিয়ে যা শীগগির কি ওষুধ-টযুদ্ধ আমাকে দিবি । হরিচরণ একটু সাহস পাইয়া ব্যস্তভাবে শয্যার অপর গ্রান্তে নামিয়া পড়িল এবং দেরাজের উপর হইতে একটা শিশি ও ছোট গেলাস হাতে করিয়া জননীর কাছে আসিয়া দাড়াইল । ছিপি খুলিবার উদ্যোগ করিতেই শৈলজা সেইখান হইতে বলিল, গেলাসে ওষুধ ঢেলে দিলেই হ’লো, না রে হরি ? জল চাইনে, মুখে দেবার কিছু চাইনে, না ? এ ব্যাগায়ঠ্যাঙ্গা কাজ তোমাদের আমি বা’র কচ্চি । ঔষধের শিশিট হাতে করিতে পাইয়া হরিচরণের হঠাৎ ভরসা হইয়াছিল, বোধ করি ফাড়াটা আজিকার মত কাটিয়া গেল। কিন্তু এই ‘মুখে দিবার কিছুর প্রশ্নে তাহা উবিয়া গেল। সে নিরুপায়ের মত এদিকে-ওদিকে চাহিয়। করুণকণ্ঠে বলিল, কোথাও কিছু নেই যে খুড়ীমা । না আনলে কোথাও কিছু উড়ে আসবে রে ? সিদ্ধেশ্বরী রাগ করিয়া বলিলেন, ও কোথায় কি পাবে যে দেবে ? এসব কি পুরুবমামুষের কাজ ? শৈলর যত শাসন এই ছেলেদের ওপরে। নীলাকে বলে যেতে পারিস্নি ? সে মুখপোড়া মেয়ে তুই আসা পৰ্যন্ত এ-ধর একবার মাড়ায় ন—একবার চেয়ে দেখে না, মা মরচে কি বেঁচে আছে । সে কি ছিল দিদি, সে আমার সঙ্গে পটলডাঙায় গিয়েছিল যে। কেন গেল ? কোন হিসেবে তুই তাকে নিয়ে গেলি ? দে, হরিচরণ, তুই ওষুধ ঢেলে দে—আমি অমনি খাব, বলিয়া সিদ্ধেশ্বরী অমুপস্থিত কন্যার উপর সমস্ত দোষটা চাপাইয়া দিয়া ঔষধের জন্য হাত বাড়াইলেন । একটু খাম্‌ হরি, আমি আনচি, বলিয়া শৈল ঘর হইতে বাহির হইয়া গেল । ቖUፎ