পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ নাই—হতবুদ্ধির মত নিঃশবে বাহিয়ে চলিয়া আসিয়াছিল। তাই এখন ফিরিয়া গিয়া সমস্ত অপমান কড়ায়-গগুয়ে শোধ দিবার অভিপ্রায়ে সে অমন মরিয়ার মত রান্নাঘরের স্বারের কাছে গিয়া দাড়াইয়াছিল। এই স্থানটা হইতে শৈলজার মুখের কিয়দংশ স্পষ্ট দেখা যাইতেছিল, এমন কি মুখ তুলিলেই অতুলকে দেখিতে পাইত ; কিন্তু রান্নায় অত্যন্ত ব্যস্ত থাকায় অতুলের পায়ের শব্দ শুনিতে পাইল না, মুখ তুলিয়া চাহিল না। কিন্তু অতুল খুড়ীমাকে আজ ভাল করিয়া দেখিল নিমিষমাত্র, তথাপি সে অনুভব করিল এ মুখ তাহার মায়ের নয়, জ্যাঠাইমার নয়—এ মুখের স্বমুখে দাড়াইয়া নিজের অভিপ্রায় জোর করিয়া ব্যক্ত করিবার মত জোর আর যাহারই থাক, অন্তত: তাহার গলায় নাই। তাহার বিস্ফারিত বক্ষ আপনি কুঞ্চিত হইয়া গেল এবং সে চুপ করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল । তাহার এটুকু পৰ্য্যস্ত সাহস হইল না—কোনরকম সাড়া দিয়াও ছোটখুড়ীমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। নীলা কি কাজে এদিকে জাসিতেছিল। হঠাৎ সেজদার পায়ের দিকে চাহিয়৷ সে থমকিয়া জিত কাটিয়া দাড়াইল এবং অলক্ষ্যে থাকিয়া ভীত ব্যাকুল ইঙ্গিতে পুনঃ পুনঃ তাহাকে জানাইতে লাগিল জুতা পায় দিয়া দাড়াইবার স্থান ওটা নয়। ছোটখুড়ীমার মানত-মুখের প্রতি কটাক্ষে দৃষ্টিপাত করিয়া অতুল অস্তরে কণ্টকিত হইয়া উঠিল । একবার মনে করিল নিঃশব্দে সরিয়া যায়, একবার ভাবিল জুতাজোড়াটা হাতে তুলিয়া লইয়া উঠানে ছুড়িয়া ফেলিয়া দেয়। কিন্তু ছোটবোনের কুমুখে ভয়ের লক্ষণ প্রকাশ করিতে তাহার অত্যন্ত লজ্জা বোধ হইল। এই নিষেধটা সে যথার্থ-ই জানিত না এবং স্পৰ্দ্ধাপূর্বক তাহা অমান্তও করে নাই। কিন্তু পিতামাতার কাছে নিরস্তুর অবারিত ও অসঙ্গত প্রশ্রয়ে তাহার অভিমান এতই সূক্ষ্ম ও তীব্র হইয়া উঠিয়াছিল যে, একটা কাজ করিয়া ফেলিয়া শেষে ভয়ে পিছাইয়া দাড়াইতে তাহার মাথা কাটা যাইত। ভৗত বিবর্ণমুখে সেইখানে দাড়াইয়া নিজের সৰ্ব্বনাশ উপলব্ধি করিয়াও সে অভিমানী দুৰ্য্যোধনের মত সুচ্যগ্রভূমিও পরিত্যাগ করিতে পারিল না । শৈলজা মুখ তুলিল । সম্বেহে মৃদ্ধ হাসিয়া বলিল, অতুল এসেছিল? দাড়া বাবা— ও কি রে ; জুতো পায়ে ? নীচে যা—নীচে যা— বাড়ির আর কোন ছেলে অমুরূপ অবস্থায় শৈলজার হাতে এত সহজে নিষ্কৃতি পাইলে ছুটিয়া পলাইয়া বাচিত, কিন্তু অতুল ঘাড় গুজিয়া দাড়াইয়া রহিল। শৈলজা উঠিয়া দাড়াইয়া বলিল, জুতে পায়ে দিয়ে এখানে আসতে নেই অতুল, নীচে যাও ! অতুল শুষ্কভাবে ক্ষীণশ্বরে কহিল, আমি ত চৌকাঠের বাইরে দাড়িয়ে আছি— এখানে দোষ কি ? ኣፀ: