পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২৬০

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ তোমাকে পালাতে দেব না তা বলে দিচ্চি। একটুখানি চুপ করিয়া, ছোটবোঁ কত দূরে আছে দেখিয়া লইয়া কহিল, এরা দু'জনে যেমন সহোদর, আমরাও ত তেমনি দুটি বোন। যেখানে যতদূরেই থাকি না কেন দিদি, আমি যত নাড়ীর টানে তোমার জন্যে কেঁদে মরব, আর কি কেউ তেমন করে কাদবে ? অপরে করবে নিজের ভালোর জন্তে, কিন্তু আমি করব ভেতর থেকে । তুমি এই যে বললে দিদি, আমি ছাড়া তোমার আর কেউ সত্যিকার আপনার জন নেই -এই কথাটি যেন কোনদিন ভুলে যেও না । সিদ্ধেশ্বরী বিগলীত-কণ্ঠে কহিলেন, এ কি ভোলবার কথা মেজবোঁ ? এতদিন যে তোমাকে চিনতে পারিনি তার শাস্তিই ত ভগবান আমাকে দিচ্চেন । মেজবে চোখের জল আঁচলে মুছিয়া কহিল, শাস্তি যা কিছু ভগবান যেন আমাকেই দেন দিদি। সমস্ত দোষ আমার, আমিই তোমাকে চিনিনি। একটুখানি খামিয়া পুনরায় কহিল, আজ যদি বা জানতে পেলুম, আমরা তোমার পায়ের ধুলোর যোগ্য নই, কিন্তু জানাবো সে-কথা কি করে দিদি ? তোমার কাছে থেকে তোমার সেবা করব, ভগবান সে দিন ত আমাকে দিলেন না। আমরা হয়েচি যে ছোটবেীর দু'চক্ষের বিষ । সিদ্ধেশ্বরী উদ্দীপ্তকণ্ঠে বলিয়া উঠিলেন, তা হলে সে যেন তার ছেলেগুলে নিয়ে দেশের বাড়িতে গিয়ে থাকে। আমি তার সাতগুটিকে দুধে-ভাতে খাওয়াব কি নিজের সর্বনাশ করবার জন্যে ? খুড়তুত ভাই, ভাজ, তাদের ছেলেপুলে—এই সম্পর্ক। ঢের থাইয়েচি, ঢের পরিয়েচি—আর না ; দালা-চাকরদের মত মুখ বুজে আমার সংসারে থাকতে পারে থাক, না হয় চলে যাক । অদূরে চৌকাঠ ধরিয়া শৈল দাড়াইয়া ছিল, সিদ্ধেশ্বরী তাহা স্বপ্নেও মনে করেন নাই। হঠাৎ তাহার আঁচলের চওড়া লাল পাড়টা প্রদীপ্ত অগ্নিরেখার মত সিদ্ধেশ্বরীর চোখের উপর জলিয়া উঠিতেই তিনি গলা বাড়াইয়। দেখিলেন ঠিক পাশের চোকাঠ ধরিয়া সে স্তন্ধভাবে দাড়াইয়া এতক্ষণের সমস্ত কথোপকথন শুনিতেছে চক্ষের পলকে ভয়ে তাহার আহারের রুচি চলিয়া গেল এবং মেজবোঁকে তাহার সমস্ত আত্মীয়তার সহিত বিলুপ্ত করিয়া দিয়া তিনি আর কোথাও চুটিয়া পলাইতে পারিলেই যেন এ-যাত্র রক্ষা পান–র্তাহার এমনি মনে হইল । মেজবোঁ মহা উদ্বিগ্নস্বরে কহিল, ও কি দিদি, শুধু ভাত নাড়চ–খাচ্চ না যে ? সিদ্ধেশ্বরী রুদ্ধকণ্ঠে শুধু বলিলেন, না । মেজবোঁ কহিল, আমার মাথা খাও দিদি, আর দুটি খাও— তাহার কথাটা শেষ না হইতেই সিদ্ধেশ্বরী জলিয়া উঠিয়া বলিলেন, কেন মিছে কতকগুলো বকচ মেজবোঁ, আমি খাব না—যাও তুমি আমার স্বমুখ থেকে, বলিয়। ቘ¢*