পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২৬১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিষ্কৃতি সহসা ভাতের থালাটা ঠেলিয়া দিয়া উঠিয়া গেলেন। নয়নতারা ষ্টা করিয়া কাঠের পুতুলের মত চাহিয়া রছিল, তাহার মুখ দিয়া একটা কথাও বাহির হইল না। কিন্তু বিহবল হইয়া নিজের ক্ষতি করিবার লোক সে নয়। সিদ্ধেশ্বরী উঠিয়া গিয়া যেখানে মুখ ধুইতে বসিয়াছিলেন তথায় গিয়া সে র্তাহার হাত ধরিয়া বিনীত-কণ্ঠে কহিল, না জেনে অন্যায় যদি কিছু বলে থাকি দিদি, আমি মাপ চাইচি । তুমি রোগা শরীরে উপোস করে থাকলে আমি সত্যি বলচি, তোমার পায়ে মাথা খুড়ে মরব। সিদ্ধেশ্বরী নিজের কাছে নিজেই লজ্জিত হইয়াছিলেন । ফিরিয়া গিয়া যা পারিলেন নীরবে আহার করিয়া উঠিয়া গেলেন। কিন্তু নিজের ঘরে বসিয়া অত্যন্ত বিমৰ্ষ হইয়া ভাবিতে লাগিলেন, আজ এত ব্যথা তিনি শৈলকে দিলেন কি করিয়া ? এবং ইহার অনিবাৰ্য্য শাস্তিস্বরূপ সে যে এইবার তাহার সেই অতি কঠোর উপবাস শুরু করিয়া দিবে ইহাতেও তাহার অণুমাত্র সংশয় রহিল না। সুতরাং পুরবেলা নীলাকে জিজ্ঞাসা করিয়া যখন শুনিতে পাইলেন খুড়ীমা তাত খাইতে বসিয়াছেন, তখন র্তাহার আহ্বাদ কতটুকু হইল বলা যায় না, কিন্তু বিস্ময়ের আর অবধি রহিল না । শৈল তাহার চিরদিনের স্বভাব অতিক্রম করিয়া কি করিয়া যে অকস্মাৎ এমন শাস্ত এবং ক্ষমাশীল হইয়া উঠিল তাহ কোনমতেই তিনি স্থির করিতে পারিলেন না। গিরীশ এবং হরিশ দুই ভাই আদালত হইতে ফিরিয়া সন্ধ্যার সময় একত্রে জল খাইতে বসিলেন । সিদ্ধেশ্বরী অদূরে মানমুখে বসিয়া ছিলেন—আজ তাহার দেহ-মন কিছুই ভালো ছিল না । গৃহিণীর মুখের পানে চাহিয়াই গিরীশের সকালের কথা স্মরণ হইল। সব কথা মনে না হোক, রমেশকে বকিতে হবে—তাহা মনে পড়িল । দ্বারের কাছে নীলা দাড়াইয়া ছিল—তৎক্ষণাৎ আদেশ করিলেন, তোর ছোটকাকাকে ডেকে আন নীলা । সিদ্ধেশ্বরী উৎকণ্ঠিত হইয়া বলিলেন, তাকে আবার কেন ? কেন ? তাকে রীতিমত ধমক দেওয়া দরকার। বসে বসে সে যে একেবারে জানোয়ার হয়ে গেল । হরিশ ইংরাজী করিয়া বলিলেন, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। সিদ্ধেশ্বরীর দিকে চাহিয়া বলিলেন, না—না, বৌঠান, তুমি তাকে আর প্রশ্রয় দিয়ে৷ ন- সে আর ছেলেমানুষটি নয় । সিদ্ধেশ্বরী জবাব দিলেন না, রুষ্টমুখে চুপ করিয়া বসিয়া রছিলেন। ર૬૭