পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐকাপ্ত তাহার হাতের লেখা বেণী দেখিবার সুযোগ ঘটে নাই, কিন্তু স্মরণ হইল হস্তাক্ষর দুষ্পাঠ্য না হইলেও ভালো নয়। কিন্তু এই পত্ৰখানি সে অত্যন্ত সাবধানে লিখিয়াছে, বোধ হয় তাহার তয়, বিরক্ত হইয়া আমি না ফেলিয়া রাখি। যেন আগাগোড়া সবটুকুই সহজে পড়িতে পারি। আচার-আচরণে রাজলক্ষ্মী সে-যুগের মানুষ। প্রণয়-নিবেদন আতিশয্য ত দূরের কথা, ‘ভালবাসি’ এমন কথাও কখনো স্বযুখে উচ্চারণ করিয়াছে বলিয়া মনে পড়ে না। সে লিখিয়াছে চিঠি—আমার প্রার্থণার অমুকুলে অনুমতি দিয়া। তবু কি জানি কি আছে পড়িতে কেমন যেন ভয় তয় করিতে লাগিল। তাহার বাল্যকালের কথা মনে পড়িল । সেদিন তাহার পড়াশুনা সাঙ্গ হুইয়াছিল গুরুমহাশয়ের পাঠশালায়। পরবর্তীকালে ঘরে বসিয়া হয়ত সামান্য কিছু বিদ্যাচর্চা করিয়া থাকিবে । অতএব, ভাষার ইন্দ্রজাল, শব্দের ঝঙ্কার, পদবিন্যাসের মাধুরী তাহার পত্রের মধ্যে আশা করা অন্যায়। সৰ্ব্বদা প্রচলিত সামান্য গোটা-কয়েক কথায় মনের ভাব ব্যক্ত করা ছাড়া আর সে কি করিখে ? একটা অনুমতি দিয়া মামুলি শুভ-কামনা করিয়া দু'ছত্র লেখা—এই ত ? কিন্তু খাম খুলিয়া পড়িতে আরম্ভ করিয়া কিছুক্ষণের জন্য বাহিরের কিছুই আর মনে রহিল না। পত্র দীর্ঘ নয়, কিন্তু ভাষা ও ভঙ্গি যত সহজ ও সরল ভাবিয়াছিলাম তাহাও নয়। জামার আবেদনের উত্তর সে এইরূপ দিয়াছে— vকাশীধাম প্রণামস্তে সেবিকার নিবেদন তোমার চিঠিখানি এইবার নিয়ে একশোবার পড়লুম। তবু ভেবে পেলুম না তুমি ক্ষেপেচ না আমি ক্ষেপেচি। ভেবেচে বুঝি হঠাৎ তোমাকে আমি কুড়িয়ে পেয়েছিলুম ? কুড়িয়ে তোমাকে পাইনি, পেয়েছিলুম অনেক তপস্তায়, অনেক আরাধনায় । তাই, বিদায় দেবার কৰ্ত্তা তুমি নও, আমাকে ত্যাগ করার মালিকানা স্বত্বাধিকার তোমার হাতে নেই। ফুলের বদলে বন থেকে তুলে বইচির মালা গেঁথে কোন শৈশবে তোমার্কে বরণ করেছিলুম সে তোমার মনে নেই। কাটায় হাত বয়ে রক্ত ঝরে পড়তে, রাঙামালার সে রাঙা-রং তুমি চিনতে পারোনি, বালিকার পূজার অর্ঘ্য সেদিম তোমার গলায়, তোমার বুকের পরে রক্তরেখায় যে লেখা একে দিত সে তোমার চোখে পড়েনি, কিন্তু যার সংসারের কিছুই বাদ পড়ে না আমার সে-নিবেদন তার পাদপদ্মে গিয়ে পোঁচেছিল । তারপরে এলো দুর্ধ্যোগের রাত, কালো মেঘে দিলে আমার আকাশের জ্যোৎস্না টেকে। কিন্তু সে সত্যিই আমি না আর কেউ, এ জীবনে যথার্থই ওসব ঘটেছিল,