পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিস্কৃতি রকমে সিদ্ধেশ্বরী প্রতিপন্ন করিবার চেষ্টা করিতেন—সে কিছুতেই তাহার স্থায্য আহার করে নাই এবং এই অস্কায়স্টুকু সংশোধন করিতে হতভাগা ছেলেটাকে তখনই তাহার চোখের উপর দাড়াইয়া একবাটি দুধ খাইতে হইত। শৈল ছেলেদের হইয়া মাঝে মাঝে লড়াই কবিত ; জবরদস্তি খাওয়ানোর অপকারিতা লইয়া তর্ক করিত ; কিন্তু সিদ্ধেশ্বরীকে জাস্তরিক ক্রুদ্ধ করিয়া তোলা ভিন্ন তাহাতে আর কোন ফল হইত না । পিদ্ধেশ্বরী যখনই যে ছেলেটার পানে চাহিতেন, তখনই দেখিতেন সে রোগ হইয়া যাইতেছে। এই লইয়া তাহার উৎকণ্ঠা, অশাস্তির অবধি ছিল না। আজ বিছানায় শুইয়া তাহার কেবলই মনে হইতে লাগিল, দেশের বাটীর বহুবিধ বিশৃঙ্খলার মধ্যে হয়ত কানাইয়ের খাইয়া পেট ভরে নাই এবং পটল নিশ্চয়ই না খাইয়া ঘুমাইয়া পড়িয়াছে, হয়ত তাহাকে তুলিয়া খাওয়ানো হইবে না, হয়ত সে সারারাত্রি ক্ষুধায় ছটফট করিবে ; কল্পনায় যতই এই সকল দুর্ঘটনা তিনি দেখিতে লাগিলেন, ততই রাগে দুঃখে বেদনায় তাহার বুক ফাটিতে লাগিল। পাশের ঘরে গিরীশ অকাতরে ধূমাইতেছিলেন। আর সহ করিতে না পারিয়া তিনি অনেক রাত্রে স্বামীর শয্যাপার্থে গিয়া উপস্থিত হইলেন। গায়ে হাত দিয়া ঘুম ভাঙাইয়। প্রশ্ন করিলেন, আচ্ছ, মানলুম যেন, পটলকে শৈল নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু কানাই ত আর তার পেটের ছেলে নয়— তার ওপর তার জোর কি ? গিরীশ ঘুমের ঝোকে জবাব দিলেন, কিছু না। সিদ্ধেশ্বরী আশান্বিত হইয়া শয্যাংশে বসিয়া বলিলেন, তা হলে আমরা নালিশ করে দিলে যে তার শাস্তি হয়ে যেতে পারে পারে কি না, ঠিক বলে। গিরীশ অসংশয়ে বলিলেন, নিশ্চয় শাস্তি হবে । সিদ্ধেশ্বরী আশায় আনন্দে উত্তেজিত হইয়া উঠিলেন । পুনশ্চ প্রশ্ন করিলেন, সে যেন হ’লো ; কিন্তু ধরে। পটল । তাকে ত আমিই মানুষ করেচি। হাকিমকে যদি বুঝিয়ে বলা যায়, সে আমাকে ছাড়া থাকতে পারে না, চাই কি ভেবে ভেবে তার শক্ত অস্থখ হতে পারে, তা হলে হাকিম কি রায় দেবে না যে, সে তার জ্যাঠাইমার কাছে থাকুক ? বেশ! অমনি তোমার নাক ডাকচে—আমার কথা বুঝি তবে শোননি। বলিয়া সিদ্ধেশ্বরী স্বামীর পায়ের উপর সজোরে নাড়া দিলেন । গিরীশ জাগিয়া উঠিলেন, নিশ্চয় না। সিদ্ধেশ্বরী রাগ করিয়া বলিলেন, কেন নয় ? মা বলেই যে ছেলেকে মেরে ফেলবে মহারাণীর কিছু এমন হুকুম নেই। কালই যদি মেজঠাকুরপোকে দিয়ে উকিলের চিঠি দিই, কি হয় তা হলে ? বলিয়া সিদ্ধেশ্বরী উত্তত্বের আশায় "איa