পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২৮৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নিস্কৃতি রমেশ কথা কহিল না, মুখ তুলিল না, যেমন ছিল তেমনি বাহির হইয়া গেল। দাদাকে সে যেমন ভক্তি-মান্ত করিত, তেমনি চিনিত। এইসব তিরস্কারের অন্তঃসারশূন্ততা সম্পূর্ণ অনুভব করিয়া সে তখনকার মত মুখ বুজিয়া বাহির হইয়া গেল । তখন শৈল আসিয়া দূর হইতে গলায় আঁচল দিয়া প্ৰণাম করিল। " গিরীশ আশীৰ্ব্বাদ করিয়া বলিলেন, এস, এস, মা এস। সে স্বরে উত্তাপ নাই, জালা নাই—বাহির হইতে প্রবেশ করিয়া কোন লোকের সাধ্য নাই যে, বলে এই মাহবটাই মুহূৰ্ত্তকাল পূৰ্ব্বে ওরূপভাবে চীৎকার করিতেছিল। গিরীশের নজরে কোনদিন কিছু পড়ে না ; কিন্তু আজ কেমন করিয়া জানি না র্তাহার দৃষ্টিশক্তি আশ্চৰ্য্য নৈপুণ্য লাভ করিল। শৈলর প্রতি চাহিয়া কহিলেন, তোমার গায়ে গয়না দেখচিনে কেন ছোটবৌমা ? শৈল অধোমুখে স্থির হইয়া রহিল । গিরীশের কণ্ঠস্বর পুনরায় এক এক পর্দা চড়িতে লাগিল—ঐ হতভাগা শূদ্বার বেচে খেয়েচে । গয়না কার? আমার ? ওকে আমি জেলে দেব তবে ছাড়ব, ইত্যাদি ইত্যাদি । বাইশে মোকদ্দমার দিন অপরাহ্ল-বেলায় হরিশ মুখ কালি করিয়া হুগলীর আদালত হইতে বাট ফিরিয়া আসিলেন এবং ধড়াচুড়া না ছাড়িয়া বিছানায় গুইয়া পড়িলেন। নয়নতার কাজ কাজ হইয়া সহস্র প্রশ্ন করিতে লাগিল ; খবর পাইয়া সিদ্ধেশ্বরী চুটিয়া আসিয়া পড়িলেন। কিন্তু হরিশ সেই যে পাশ ফিধিয়া নীরব হইয়া রহিলেন, কেহই তাহার মুখ হইতে একটা জবাবও বাহির করিতে পারিল না । মোকদ্দমায় যে হার হইয়াছে তাহাতে সংশয় নাই—ন্থই জায়ে নিরস্তর বুঝাইতে লাগিলেন—মোকদ্দমায় হার-জিত আছেই—তা ছাড়া এখনও হাইকোর্ট আছে, বিলাতে আপীল করা আছে—এরই মধ্যে এমন করিয়া ভাঙিয়া পড়িবার কিছুমাত্র হেতু নাই । কিন্তু আশ্চৰ্য্য এই যে, এই দুটি স্ত্রীলোকের যে আশা-ভরসা ছিল, নিজে উকিল হইয়াও হরিশের তাহার কণামাত্রও দেখা গেল না। সিদ্ধেশ্বরী আর সহ করিতে না পারিয়া হরিশের হাত ধরিয়া বলিলেন, মেজঠাকুরপো, জামি বলচি, তোমাদের হার হবে না । যত টাকা লাগে আমি দেব, তুমি হাইকোর্ট কয়। আমি আশীৰ্ব্বাদ করচি তুমি জিতবেই ! এতক্ষণে হরিশ মুখ ফিরাইয়া মাথা নাড়িয়া বলিলেন, না বৌঠান, সে হবার জে৷ নেই–গৰ শেষ হয়ে গেছে। হাইকোর্টই বল, আর বিলাতই বল—কোথাও কোন ኳዓ¢