পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/২৯০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ বিজয় । তা জানিনে বিলাসবাৰু। হয়ত দান করে বন্ধুর শেষ আত্মসম্মানবোধৰ্টুকু বাবা নিঃশেষ করতে চাননি । $ বিলাস । দেখুন, এসব আপনার কবিত্বের কথা, নইলে ঋণ ছেড়ে দেবার উপদেশ তিনি আপনাকেও দিয়ে যেতে পারতেন। কিসের জন্য তা করেননি ? বিজয়া । তা জানিনে । কোন আদেশ দিয়েই তিনি আমাকে আবদ্ধ করে যাননি । বরঞ্চ, কথা উঠলে বাবা এই কথা বলতেন, মা, তোমার ধৰ্ম্মবুদ্ধি দিয়েই তোমার কর্তব্য নিরূপণ ক’রো। আমার ইচ্ছের শাসনে তোমাকে আমি বেঁধে রেখে যাব না। কিন্তু পিতৃঋণের দায়ে পুত্রকে গৃহহীন করার সঙ্কল্প বোধ হয় তার ছিল না। র্তার ছেলের নাম শুনেছি নরেন্দ্র । তিনি কোথায় আছেন জানেন ? বিলাস । জানি । মাতাল বাপের শ্রাদ্ধ শেষ করে সে নাকি বাড়িতেই আছে। পিতৃঋণ যে শোধ করে না সে কুপুত্র। তাকে দয়া করা অপরাধ । বিজয়া। আপনার সঙ্গে বোধ হয় তার আলাপ আছে ? বিলাস। আলাপ ! ছিঃ-আপনি আমায় কি মনে করেন বলুন তো ? আমি তে ভাবতেই পারিনে যে, জগদীশ মুখুয্যের ছেলের সঙ্গে আমি আলাপ করেছি। তবে সেদিন রাস্তায় হঠাৎ পাগলের মত একটা নতুন লোক দেখে আশ্চর্যা হয়েছিলুম— শুনলাম সেই নাকি নরেন মুখুয্যে । বিজয় । পাগলের মত ? কিন্তু শুনেছি নাকি ডাক্তার ? বিলাস । ডাক্তার ! আমি বিশ্বাস করিনে। যেমন আকৃতি তেমনি প্রকৃতি ; একটা অপদার্থ লোফার ! বিজয় । আচ্ছা বিলাসবাবু, জগদীশবাবুর বাড়িটা যদি সত্যিই আমরা দখল করে নিই, গ্রামের মধ্যে কি একটা বিশ্ৰী গোলমাল উঠবে না ? বিলাস । একেবারে না । আপনি পাঁচ-সাতখানা গ্রামের মধ্যে একজনও পাবেন না, এই মাতালটার ওপর যার বিন্দুমাত্র সহানুভূতি ছিল । আহা বলে এমন লোক এ অঞ্চলে নেই। তাও যদি না হ’ত আমি বেঁচে থাকা পর্যন্ত সে চিন্তা আপনার মনে আনা উচিত নয় । তৃত্য আসিয়া চা দিয়া গেল । ক্ষণেক পরে ফিরিয়া আসিয়া বলিল । কালীপদ (ভূত্য )। একজন ভদ্রলোক দেখা করতে চান । বিজয়া । এইখানে নিয়ে এস । [ ভূত্যের প্রস্থান ] বিজয়া। আর পারিনে। লোকের আসা-যাওয়ার আর বিরাম নেই। এর চেয়ে বরং কলকাতায় ছিলুম ভাল । - [ নরেনের প্রবেশ ] ২৮২