পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত কখনো চোখে দেখেনি। আশীৰ্ব্বাদ করি চিরজীবী হও । জিজ্ঞাসা করিলাম, বিয়ে কবে ? এই মাসের পচিশে স্থির হয়েচে, মধ্যে কেবল দশটা দিন বাকী। কাল পাকাদেখা ; আশীৰ্ব্বাদ--বেলা তিনটের পরে বারবেলা, এর ভেতরেই শুভকৰ্ম্ম সমাধা করে নিতে হবে। কিন্তু তুমি না গেলে বরঞ্চ সব বন্ধ থাকবে, তবু কিছুই হতে পারবে না। এই নাও তোমার পুটুর চিঠি—সে নিজের হাতে লিখে পাঠিয়েচে । কিন্তু তাও বলি দাদা, যে রত্ন তুমি স্বেচ্ছায় হারালে তার জোড়া কখনো পাবে না। এই বলিয়া তিনি ভাজ-করা একখগু হলদে রঙের কাগজ আমার হাতে দিলেন । কৌতুহলবশতঃ চিঠিখানা পড়িবার চেষ্টা করিলাম, ঠাকুর্দী হঠাৎ একটা দীর্ঘশ্বাস ত্যাগ করিয়া বলিলেন, কালিদাসের পয়সা থাকলে হবে কি, একেবারে ছোটলোক – চামার। চোখের চামড়া বলে তার কোন বালাই নেই। কালই টাকাকড়ি সব নগদ চুকিয়ে দিতে হবে, গহনাপত্র নিজের স্তাকুর দিয়ে গড়িয়ে নেবে । ওর কাউকে বিশ্বাস নেই—এমন কি, আমাকে পৰ্য্যন্ত না । লোকটার মস্ত দোষ । ঠাকুর্দাকে পৰ্য্যস্ত বিশ্বাস করে না-আশ্চৰ্য্য! পুটু স্বহস্তে পত্র লিখিয়াছে। একপাত দুপাতা নয়, চার-পাতা-জোড়া ঠাসূবুনানি । চারপাতাই সকাতর মিনতি । ট্রেনে রাঙাদিদি বলিয়াছিলেন, আজকালকার নাটক-নভেল হার মানে। কেবল আজকালকার নয়, সৰ্ব্বকালের নাটক নভেল হার মানে তাহ অম্বীকার করিব না । এই লেখার জোরে নন্দরাণীর স্বামী চৌদ্দ দিনের ছুটি লইয়া সাতদিনের দিন আসিয়া হাজির হইয়াছিল কথাটা বিশ্বাস इङ्ग्रेज ! অতএব, জামিও পরদিন সকালেই যাত্রা করিলাম। টাকাটা সত্যই সঙ্গে লইয়াছি এবং ভাঙচুর করিয়া প্রতারণা করিতেছি না—ঠাকুর্দা নিজের চক্ষে তাহ ৰাচাই করিয়া লইলেন, বলিলেন, পথ চলবে জেনে, টাকা নেবে গুনে । আমরা দেবত নই তো রে তাই, মানুষ –ভুল হতে কতক্ষণ । সত্যই ত ! রতন কাল রাত্রেই কাশী রওনা হইয়া গিয়াছে। তাহার হাতে চিঠির জবাব দিয়াছি, লিখিয়া দিয়াছি-তথাস্তু। ঠিকানা দিতে পারি নাই ঠিক নাই বলিয়া। এ ত্রুটি যেন সে নিজগুণে ক্ষমা করে, এ প্রার্থনাও জানাইম্বাছি । যথাসময়ে গ্রামে পৌছিলাম, বাড়িগুদ্ধ লোকের দুশ্চিন্তা ঘুচিল । ষত্ব ও সমাদর স্বাহ পাইলাম তাহ প্রকাশ করিবার ভাষা অভিধানে নাই । Հ*