পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৩৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিজয়৷ নলিনী । কথা দিলেন ? নরেন। হ্যা, দিলুম কথা । হয়ত এমনি কথা বিজয়াকেও দিতুম যদি তিনি নিজে অনুরোধ করতেন । কাজের ক্ষতি হলেও । নলিনী । দেখুন ডক্টর মুখার্জি, এ বিবাহে বিজয়ার মুখ নেই, আনন্দ নেই, এই আমার ঘোরতর সন্দেহ । সেই জন্যেই আপনাকে অনুরোধ করেননি । নরেন । কিন্তু তিনি নিজেই তো সম্মতি দিয়েছেন। নলিনী । দিয়েছেন মুখের সম্মতি—হয়ত বাধ্য হয়ে । কিন্তু অস্তরের সম্মতি কখনো দেননি। আমার মামার মত নিরীহ সরল মানুষ, যিনি সামনে ছাড়া এতটুকু আশেপাশে দেখতে পান না, তারও কেমন যেন সংশয় জেগেছে, বিজয়া যাকে চায় সে লোক ওই বিলাসবাবু নয়। কালই বলছিলেন আমাকে, বিবাহ আয়োজনের সব ভারটাই এসে পড়েছে আমার পরে, কিন্তু মনে উৎসাহ পাইনে মা, কেবল ভয় হতে থাকে যেন কি একটা গর্হিত কাজে প্রবৃত্ত হয়েছি। যতই দেখি ওকে ততই মনে হয় দিন দিন শুকিয়ে যেন বিজয়া কালি হয়ে যাচ্ছে। কেনই বা এখানে এসেছিলুম, শেষ বয়সে যদি পাপ অর্জন করেই যাই, মরণের পরে তার কাছে গিয়ে কি জবাব দেব মা ! নরেন। দেখুন মিস দাস, ওসব কিছু না । বিজয়া সেই দিন অস্থখ থেকে উঠলেন, এখনো সেরে উঠতে পারেননি । নলিনী । তাই প্রতিদিন শুকিয়ে যাচ্ছেন। ডক্টর মুখার্জি, আমার মামা তৰু সামনাসামনি দেখতে পান, কিন্তু আপনি তাও পান না। আপনি তার চেয়েও অন্ধ । সেদিনের কথা মনে করে দেখুন, ভালোবাসলে কোন মেয়ে প্রভু-ভৃত্য সম্বন্ধের কথা বিলাসবাবুকে কিছুতেই বলতে পারতেন না,—ত যত রাগই হোক । নরেন। বড়-লোক টাকার অহঙ্কারে সব পারে মিস্ দাস । ওদের মুখে কিছু আটকীয় না । } নলিনী । এ বলা আপনার ভারী অন্যায় ডক্টর মুখার্জি। আপনার আগে আমি ওঁকে দেখেছি—আমর এক কলেজে পড়তুম। ঐশ্বৰ্য্য আছে, কিন্তু ঐশ্বৰ্য্যের গৰ্ব্ব কোনদিন কেউ অনুভব করিনি। ওঁর কত দয়া, কত দান, কত পুণ্য অনুষ্ঠান—মনে নেই আপনার ? অপরিচিত আপনি, তবু, আপনার কথাতেই পূৰ্ণবাবুর বাড়ির পূজোর অনুমতি তখনি দিয়ে দিলেন। বিলাসবাবু, রাসবিহারীবাবু শত চেষ্টাতেও তা বন্ধ করতে পারলে না। ভদ্রতা, সহানুভূতি, ন্যায়-অন্যায়বোধ কতটা জাগ্রত থাকলে এরকম হতে পারে একবার ভেবে দেখুন দিকি । আমার মামা তো গরীব, কিন্তু কি শ্রদ্ধাই না তাকে করেন ? এ কি ধনীর দপের প্রকাশ ডক্টর মুখার্জি ? নরেন । ( কিছুক্ষণ চিন্তা করিয়া) সে সত্যি। কেউ অভূক্ত জানলে না খাইয়ে భిన్క్రి