পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৩৮১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিজয়ী সব কথা শুনতে গেলে আর বেঁচে থাকা চলে না। আশীৰ্ব্বাদ করি, স্বর্থী হওঁ, দীর্ঘজীবী হও,—বিলাসবাবুকে চোখে দেখিনি, কিন্তু কর্তার মুখে শুনি খাসা ছেলে। { সহাস্তে ) বর পছন্দ হয়েছ তো মা, নিজে বেছে নিয়েছ— বিজয় । বেছে নেবার কি আছে মামীম । মেয়েদের সম্বন্ধে সব পুরুষই সমান। মুগের ভদ্রতায় কেউ বা একটু ইসিয়ার, কেউ বা তা নয়। প্রয়োজন হলে দুটাে মিষ্ট কথা বলে, প্রয়োজন ফুরালে উগ্ৰমূৰ্ত্তি ধরে । ওর ভালোমন্দ নেই মামীম, আমাদের দুঃখের জীবন শেষ পর্য্যন্ত দুঃখেই কাটে । নলিনী । এ-কথা বলা আপনার উচিত নয় মিস্ রায়। বিজয় । এখন তর্ক করব না, কিন্তু নিজের বিবাহ হলে একদিন স্মরণ করবেন, বিজয়া সত্যি কথাই বলেছিল। কিন্তু আর দেরি নয়, আমি আসি। কানাই সিং— { নেপথ্যে ]–মাইজি-— দয়াল । ( ব্যস্তভাবে ) অন্ধকার রাত, একটা আলো এনে দিই মা । বিজয়া । (হাসিয়া) অন্ধকার কোথায় দয়ালবাবু, বাইরে জ্যোৎস্নায় আকাশ ভেসে যাচ্ছে । আমরা বেশ যেতে পারব, আপনি উদ্বিগ্ন হবেন না ! নমস্কার ।

  • বিজয়া বাহির হইয়া গেল ] দয়ালের স্ত্রী । ( স্বামীর প্রতি ) মেয়েটি কি বললে—শুনলে ? দয়াল। কি ? দয়ালের স্ত্রী ! তোমাদের কি কান নেই ? এসে পর্য্যস্ত ওর কথায় যেন একটা কান্নার স্বর। হাসছিল তখনও । বিজয়াকে আগে কখনও দেখিনি, কিন্তু ওর মুখ দেখে আজ মনে হ’লে যেন ওকে কেউ বলি দিতে নিয়ে যাচ্ছে । জিজ্ঞাসা করলুম, বর পছন্দ হয়েছে তো মা ? বললে, পছন্দ হবার কি আছে মামীম, মেয়েদের দুঃখের জীবন শেষ পর্য্যন্ত দুঃখেই কাটে। এ কি আহলাদের বিয়ে ? দেখো, কোথায় কি একটা গোলমাল বেঁধেছে। ওর মা নেই, বাপ নেই—মুখ দেখলে বড় মায়া হয় । না বুঝে-মুঝে একটা কাজ করে বসো না ।

দয়াল । আমি কি করতে পারি বল ? রাসবিহারীবাবু কৰ্ত্ত । দয়ালের স্ত্রী । তার ওপরেও আর একজন কৰ্ত্ত আছে মনে রেখো। তুমি ওর মন্দিরের আচাৰ্য্য, ওর টাকায়, ওর বাড়িতে তোমরা খেয়ে-পরে মুখে আছ,—ওর ভালো-মন্দ মুখ-দুঃখ দেখা কি তোমার কৰ্ত্তব্য নয় ? সমস্ত না তেবেই কি একটা করে বসবে । দয়াল । তবে কি করব বল ? দয়ালের স্ত্রী। এ বিয়েতে আচাৰ্য্যগিরি তুমি ক’রো না। আমি বলছি, তোমাকে একদিন মনস্তাপ পেতে হবে । © ማህ»