পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ বিদ্যমান। বৈষ্ণবীর নানা বয়সের ও নানা চেহারার এবং নানা কাজে ব্যাপৃত। কেহ দুধ জাল দিতেছে, কেহ ক্ষীর তৈরী করিতেছে, কেহ নাডু পাকাইতেছে, কহ ময়দা মাখিতেছে, কেহ ফলমূল বানাইতেছে—এসকল ঠাকুরের রাত্রের ভোগের ব্যাপার । একজন অপেক্ষাকৃত অল্পবয়সী বৈষ্ণবী একমনে বসিয়া ফুলের মালা গাঁথিতেছে এবং তাহারই কাছে বসিয়া আর একজন নানা রঙের ছাপানো ছোট ছোট বস্ত্রথও সযত্বে কুঞ্চিত করিয়া গুছাইয়া তুলিতেছে, সম্ভবত: শ্ৰীশ্ৰীগোবিন্দ্ৰ জীউ কাল স্নানাস্তে পরিধান করিবেন। কেহই বসিয়া নাই, তাহাদের কাজের আগ্রহ ও একাগ্রতা দেখিলে আশ্চৰ্য্য হইতে হয় । সকলেই আমার প্রতি চাহিয়া দেখিল, কিন্তু নিম্যেমাত্র । কৌতুহলের অবসর নাই, ওষ্ঠাধর সকলেরই নড়িতেছে, বোধ হয় মনে মনে নাম-জপ চলিতেছে। এদিকে বেলা শেষ হইয়া দুই-একটা করিয়া প্রদীপ জলিতে শুরু করিয়াছে ; কমললত কহিল, চলো ঠাকুর নমস্কার করে আসবে। কিন্তু আচ্ছা—তোমাকে কি বলে ডাকব বল ত ? নতুনগোসাই বলে ডাকলে হয় না ? বলিলাম, কেন হবে না ? তোমাদের এখানে গহুর পর্য্যস্ত যখন গহুরর্গোসাই হয়েচে তখন আমি ত অন্ততঃ বামুনের ছেলে। কিন্তু আমার নিজের নামটা কি দোষ করলে । তার সঙ্গেই একটা গোসাই জুড়ে দাও না ? কমললতা মুখ টিপিয়া হাসিয়া বলিল, সে হয় না ঠাকুর, হয় না। ও নামট আমার ধরতে নেই—অপরাধ হয়, এসে । তা যাচ্চি, কিন্তু অপরাধটা কিসের ? কিসের তা তোমার শুনে কি হবে ? আচ্ছা মানুষ ত ! ষে বৈষ্ণবীটি মালা গাধিতেছিল সে ফিক করিয়া হাসিয়া কেলিয়াই মুখ নীচু করিল ! ঠাকুরঘরে কালোপাথর ও পিতলের রাধাকৃষ্ণ যুগলমূৰ্ত্তি। একটি নয়, অনেকগুলি। এখানেও জন পাঁচ-ছয় বৈষ্ণবী কাজে নিযুক্ত। আরতির সময় হুইয়া আসিতেছে, নিশ্বাস ফেলিবার অবকাশ নাই । ভক্তিভরে যথারীতি প্ৰণাম করিয়া বাহির হইয়া আসিলাম। ঠাকুরঘরটি ছাড়া অন্ত সব ঘরগুলিই মাটির, কিন্তু সযত্ন পরিচ্ছন্নতার সীমা নাই । বিনা আসনে কোথাও বসিতেই সঙ্কোচ হয় না, তথাপি কমললতা পুবের বারান্দার একধারে জাসন পাতিয়া লি, কহিল, বলো, তোমার থাকবার ঘরটা একটু গুছিয়ে দিয়ে আসি । আমাকে এখানেই আজ থাকতে হবে নাকি ? কেন, ভয় কি ? আমি থাকতে তোমার কষ্ট হবে না। বলিলাম, কষ্টের জন্য নয়, কিন্তু গহর রাগ করবে ষে । বৈষ্ণবী কহিল, সে ভার আমার। আমি ধরে রাখলে তোমার বন্ধু একটুও রাগ try