পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৫২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ অপরাধ শুধু একটা দিকেই হয় তা নয়। বৈষ্ণবী এ অনুযোগের আর জবাব দিল না, নীরবে বাহির হইয়া গেল। অল্প একটুখানি পরেই সে অন্য একটি বৈষ্ণবীর হাতে আলো ও আসন এবং নিজে প্রসাদের পাত্ৰ লইয়া প্রবেশ করিল, কহিল, অতিথিসেবার ক্রটি হবে নতুনগোসাই, কিন্তু এখানকার সমস্তই ঠাকুবের প্রসাদ । হাসিয়া বলিলাম, ভয় নেই গো সন্ধ্যার বন্ধু, বোষ্টম না হয়েও তোমার নতুনগোসাইজীর রসবোধ আছে, আতিথ্যের ক্রটি নিয়ে সে রসভঙ্গ করে না। রাখো কি আছে—ফিরে এসে দেখবে প্রসাদের কণিকাটুকুও অবশিষ্ট নেই। ঠাকুরের প্রসাদ অমনি করেই ত খেতে হয় । এই বলিয়া কমললতা নীচে ঠাই করিয়া সমূদয় খাদ্যসামগ্ৰী একে একে পরিপাটি করিয়া সাজাইয়া দিল । পরদিন অতি প্রত্যুষেই ঘুম ভাঙিয়া গেল কাসর-ঘন্টার বিকট শব্দে। সুবিপুল বাস্তম্ভাগু-সহযোগে মঙ্গল আরতি শুরু হইয়াছে। কানে গেল ভোরের সুরে কীৰ্ত্তনের পদ-কাম-গলে বনমালা বিরাজে, রাই-গলে মোতি সাজে। আরুণিত চরণে মঞ্জীর রঞ্জিত খঞ্জন গঞ্জন লাজে। তারপরে সারাদিন ধরিয়া চলিল ঠাকুরসেবা। পূজা, পাঠ, কীৰ্ত্তন, নাওয়ানো-খাওয়ানো, গা-মোছানো, চন্দন-মাখানে, মালা-পরানো— ইহার আর বিরাম-বিচ্ছেদ নাই। সবাই ব্যস্ত, সবাই নিযুক্ত। মনে হইল পাথরের দেবতারই এই অষ্টপ্রহরব্যাপী অফুরস্ত সেবা সহে, আর কিছু হইলে এত বড় ধকলে কৰে ক্ষইয়া নিঃশেষ হইয়া যাইত । কাল বৈষ্ণবীকে জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম, তোমরা সাধন-ভজন কর কখন ? সে উত্তরে বলিয়াছিল—এই ত সাধন-ভজন। সবিস্ময়ে প্রশ্ন করিয়াছিলাম, এই রাধাবাড়া, ফুল-তোলা, মালা-গাথা, দুধ জ্বাল-দেওয়া, একেই বলো সাধনা ? সে মাথা নাড়িয়া তখনি জবাব দিয়া বলিয়াছিল, ই, আমরা একেই বলি সাধনা—আমাদের আর কোন সাধন-ভজন নেই। আজ সমস্তদিনের কাগু দেখিম্বা বুঝিলাম কথাগুলো তাহার বর্ণে বর্ণে সত্য । অতিরঞ্জন অত্যুক্তি কোথাও নাই। দুপুরবেলা কোন এক ফাকে বলিলাম, কমললত, আমি জানি তুমি অন্ত সকলের মত নও। সত্যি বল ত ভগবানের প্রতীক এই ষে পাথরের মূৰ্ত্তি— 3. বৈষ্ণবী হাত তুলিয়া আমাকে থামাইয়া দিল, কহিল, প্রতীক কি গো—উনিই ষে সাক্ষাৎ ভগবান! এমন কথা আর কখনো মুখেও এনে না নতুনগোসাই— জামার কথাম্ব সেই ষেন লজ্জা পাইল বেশী। আমিও কেমন একপ্রকার