পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৬৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঐকান্তু একমুহূৰ্ত্ত মৌন থাকিয়া বৈষ্ণবী পুনরায় কহিল, সেদিন ঠাকুরের প্রসাদী মালা ঠাকুরের পাদপদ্মে ফিরিয়ে দিয়ে এলুম। মন্মথর অশৌচ গেল কিন্তু পাপিষ্ঠ। উষার অশৌচ ইহজীবনে আর সুচল না নতুনগোঁসাই। কহিলাম, তারপরে ? বৈষ্ণবী মুখ ফিরাইয়াছিল, জবাব দিল না। বুঝিলাম, এবার তাহার সামলাইতে সময় লাগিবে । অনেকক্ষণ পৰ্য্যস্ত উভয়েই নীরবে বসিয়া রছিলাম। ইহার শেষ অংশটুকু শুনিবার আগ্রহ প্রবল হইয়া উঠিল, কিন্তু প্রশ্ন ধরা উচিত কিন৷ ভাবিতেছিলাম, বৈষ্ণবী আর্দ্র মুম্বুকণ্ঠে নিজেই বলিল, দ্যাথো গোসাই, পাপ জিনিসটা সংসারে এমন ভয়ঙ্কর কেন জানো ? বলিলাম, নিজের বিশ্বাসমত জানি একরকম, কিন্তু তোমার ধারণীর সঙ্গে সে হয়ত না মিলতে পারে । সে প্রত্যুত্তরে কহিল, জানিনে তোমার বিশ্বাস কি, কিন্তু সেদিন থেকে আমি একে আমার মত করে বুঝে রেখেচি গোঁসাই। স্পৰ্দ্ধাভরে তুমি কত লোককে বলতে গুমবে, কিছুই হয় না। তারা কত লোকের নজির দিয়ে তাদের কথা প্রমাণ করতে চাইবে । কিন্তু তার ত কোন দরকার নেই । তার প্রমাণ মন্মথ, প্রমাণ আমি নিজে । আজও কিছু আমাদের হয়নি। হলে একে এত ভয়ঙ্কর আমি বলতুম না। কিন্তু তা ত নয়, এর দণ্ড ভোগ করে নিরপরাধ নির্দোধী লোকেরা ! যতীনের বড় ভয় ছিল আত্মহত্যায়, কিন্তু সে তাই দিয়ে তার দিদির অপরাধের প্রায়শ্চিত্ত করে গেল । বল ত গোসাই, এর চেয়ে ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুর সংসারে আর কি আছে ? কিন্তু এমনই হয়, এমনি করেই ঠাকুর বোধ হয় তার স্বষ্টি ক্ষা করেন । এ লইয়া তর্ক করিয়া লাভ নাই । তাহার যুক্তি এবং ভাষা বোনটাই প্রাঞ্জল ময়, তথাপি ইহাই মনে করিলাম তাহীর দুস্কৃতির শোকাচ্ছন্ন স্মৃতি হয়ত এই পথেই আপন পাপ-পুণ্যের উপলব্ধি অর্জন করিয়া সাস্তুনা লাভ করিয়াছে। জিজ্ঞাসা করিলাম, কমললতা, এর পরে কি হ’লে ? শুনিয়া সহসা সে ব্যাকুল হইয়া বলিয়া উঠিল, সত্যি বল গোসাই, এর পরেও আমার কথা তোমার শুনতে ইচ্ছে করে ? সত্যি বলচি করে । বৈষ্ণবী বলিল, আমার ভাগ্য যে এজন্মে আবার তোমার দেখা পেলুম। এই বলিয়া সে কিছুক্ষণ চুপ করিয়া আমার প্রতি চাহিয়া থাকিয়া কহিল, দিনচারেক পরে একটা মরা ছেলে ভূমিষ্ঠ হ’লো, তাকে গঙ্গার তীরে বিসর্জন দিয়ে গঙ্গায় স্নান করে বাসায় ফিরে এলুম। বাবা কেঁদে বললেন, আমি ত আর থাকতে পারিনে মা। বললুম, না বাবা, তুমি আর থেকে না, তুমি বাড়ি যাও। অনেক দুঃখ দিলুম, আর (R