পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ তুমি আমার জন্তে ভেবে না । বাবা বললেন, মাঝে মাৰে খবর দিবি ত মা । বললুম, না বাবা, আমার খবর নেবার আর তুমি চেষ্টা ক’রো না । কিন্তু তোমার মা যে এখনো বেঁচে রয়েচে উষা ? বললুম, আমি মরব না বাবা, কিন্তু আমার সতীলক্ষ্মী মা, তাকে ব’লে৷ উষা মরেচে। মা দুঃখ পাবেন, কিন্তু মেয়ে তার বেঁচে আছে শুনলে তার চেয়েও বেশী দুঃখ পাবেন । চোখের জল মুছে বাবা কলকাতায় চলে গেলেন। আমি চুপ করিয়া বসিয়া রহিলাম। কমললতা বলিতে লাগিল, হাতে টাকা ছিল, বাড়িভাড়া চুকিয়ে দিয়ে আমিও বেরিয়ে পড়লুম। সঙ্গী জুটে গেলে—তারা যাচ্ছিল শ্ৰীবৃন্দাবনধামে— আমিও সঙ্গ নিলুম। বৈষ্ণবী একটু থামিয়া বলিল, তারপরে কত তীর্থে, কত পথে, কত গাছতলায় কতদিন কেটে গেল । বলিলাম, তা জানি, কিন্তু কত শত বাবাজীর কত শতসহস্ৰ চোখের দৃষ্টির বিবরণ ত বললে না কমললতা ? বৈষ্ণবী হাসিয়া ফেলিল, কহিল, বাবাজীদের দৃষ্টি অতিশয় নিৰ্ম্মল, তাদের সম্বন্ধে অশ্রদ্ধার কথা বলতে নেই গোঁসাই। বলিলাম, না না, অশ্রদ্ধা নয়, অতিশয় শ্রদ্ধার সঙ্গেই তাদের কাহিনী শুনতে চাইচি কমললতা । এবার সে হাসিল না বটে, কিন্তু চাপা হাসি গোপন করিতেও পারিল দা, কহিল, যে বাবাজী ভালোবাসে তাকে সব কথা খুলে বলতে নেই, আমাদের বোষ্টমের শাস্ত্রে নিষেধ আছে । বলিলাম, তবে থাক। সব কথায় কাজ নেই, কিন্তু একটা বল, গোসাইঞ্জী দ্বারিকাদাসকে জোগাড় করলে কোথায় ? কমললতা সঙ্কোচে জিভ কাটিয়া কপালে হাত ঠেকাইল, বলিল, ঠাট্র। করতে নেই, উনি যে আমার গুরুদেব গোসাই । গুরুদেব ! তুমি ওঁর কাছেই দীক্ষা নিয়েচ ? না, দীক্ষা মিইনি বটে, কিন্তু উনি তার মতই পূজনীয়। কিন্তু এই যে এতগুলি বৈষ্ণবী—সেবাদাসী না কি যে বলো— কমললতা পুনশ্চ জিভ কাটিয়া বলিল ওরা আমার মতই ওঁর শিয়া। ওদেরও তিনি উদ্ধার করেচেন । কহিলাম, নিশ্চয়ই করেচেন, কিন্তু পরকীয়া সাধনা, না কি এমনি একটা সাধন