পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৭০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ স্বাধতে পারলে না । একটু ধামিয়া সে যেন হঠাৎ নিজের মনেই বলিয়া উঠিল, তারা রলের খবর ত পায় না, তাই প্রাণহীন নিজাব পুতুলের নিরর্থক সেবায় প্রাণ তাদের দু'দিনে ইপিয়ে ওঠে, ভাবে এ কোন মোহের ঘোরে নিজেকে দিনরাত ঠকিয়ে মরি । এদের দেখেই আমাদের তোমরা উপহাস করতে শেথো—কিন্তু এ কি আমি বাজে বকে মরচি গোসাই, এসব অসংলগ্ন প্রলাপের তুমি ত একটা কথাও বুঝবে না। কিন্তু এমন ধদি কেউ তোমার থাকে, তুমি তাকে ভুলবে, কিন্তু সে তোমাকে না পারবে ভুলতে, না শুকোবে কখনো তার চোখের জলের ধারা । স্বীকার করিলাম যে, তাহার বক্তব্যের প্রথম অংশটা বুঝি নাই, কিন্তু শেষের দিকটার প্রতিবাদে কহিলাম, তুমি কি আমাকে এই কথাই বলতে চাও কমললতা যে, আমাকে ভালোবাসার নামই হ’লো দুঃখ পাওয়া ? দুঃখ ত বলিনি গোসাই, বলচি চোখের জলের কথা । কিন্তু ও দুই-ই এক কমললতা, শুধু কথার ঘোরফের। বৈষ্ণবী কহিল, না গোসাই, ও দুটো এক নয়। না কথার ঘোরফের, না ভাবের । মেয়েরা ওর এটাও ভয় করে না, ওটাও এড়াতে চায় না। কিন্তু তুমি বুঝবে কি করে ? কিছুই যদি না বুঝি আমাকে বলাই বা কেন ? না বলেও যে থাকতে পারিনে গো । প্রেমের বাস্তবতা নিয়ে তোমরা পুরুষের দল যখন বড়াই করতে থাকো তখন ভাবি আমাদের জাত যে আলাদা ! তোমাদের ও আমাদের ভালোবাসার প্রকৃতিই যে বিভিন্ন | তোমরা চাও বিস্তার, আমরা চাই গভীরতা, তোমার৷ চাও উল্লাস, আমরা চাই শাস্তি । জানো গোসাই, ভালোবাসার নেশাকে আমরা অস্তরে ভয় করি, ওর মত্ততায় আমাদের বুকের কাপন থামে না ! কি-একটা প্রশ্ন করিতে যাইতেছিলাম, কিন্তু সে গ্রাহই করিল না, ভাবের আবেগে বলিতে লাগিল, ও আমাদের সত্যিও নয়, আমাদের আপনও নয়। ওর ছুটোছুটির চঞ্চলত যেদিন থামে সেইদিনেই কেবল আমরা নিশ্বাস ফেলে বাচি । ওগো নতুনগোসাই, নির্ভর হতে পারার চেয়ে ভালোবাসার বড় পাওয়া মেয়েদের আর নেই, কিন্তু ঐ জিনিসটাই ষে তোমার কাছে কেউ কখনো পাবে না। জিজ্ঞাসা করিলাম, পাবে না নিশ্চয় জানো ? বৈষ্ণবী বলিল, নিশ্চয় জানি । তাই তোমার বড়াই আমার সয় না। আশ্চৰ্য্য হইলাম। বলিলাম, বড়াই ত তোমার কাছে কখনো করিনি কমললতা ? সে কহিল, জেনে করোনি, কিন্তু তোমার ঐ উদাসীন বৈরাগী মম-ওর চেয়ে বড় অহঙ্কারী জগতে আর কিছু অাছে নাকি ! tN