পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৭৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত চোখের উপরেই যেন দেখিতে লাগিলাম। বলিলাম, আর শোব না কমললত, চল তোমার সঙ্গে ফুল তুলে আনি গে। বৈষ্ণবী কহিল, তুমি স্নান করোনি, কাপড় ছাড়োনি, তোমার ছোয়া ফুলে পূজো হবে কেন ? বলিলাম, ফুল তুলতে না দাও, ডলি মুইয়ে ধরতে দেবে ত ? তাতেও তোমার সাহায্য হবে। বৈষ্ণবী বলিল, ডাল নোয়াবার দরকার হয় না, ছোট ছোট গাছ, আমি নিজেই পারি । বলিলাম, অন্তত: সঙ্গে থেকে দুটো সুখ-দুঃখের গল্প করতেও পারব ত ? তাতেও তোমার শ্রম লঘু হবে । এবার বৈষ্ণবী হাসিল, কহিল, হঠাৎ বড় দরদ গোসাই-আচ্ছা চলে । আমি সাজিটা আনি গে, ততক্ষণ হাতমুখ ধুয়ে কাপড় ছেড়ে নাও। আশ্রমের বাহিরে অল্প একটু দূরে ফুলের বাগান। ঘনছায়াচ্ছন্ন আমবনের ভিতর দিয়া পথ । শুধু অন্ধকারের জন্য নয়, রাশিরুত শুকনা পাতায় পথের রেখা বিলুপ্ত। বৈষ্ণবী আগে, আমি পিছনে, তবু ভয় করিতে লাগিল পাছে সাপের ঘাড়ে পা দিই ! বলিলাম, কমললতা, পথ ভুলবে না ত ? বৈষ্ণবী বলিল, না । অন্ততঃ তোমার জন্তেও আজ পথ চিনে আমাকে চলতে হবে | কমললতা, একটা অঙ্গুরোধ রাখবে } কি অনুরোধ ? - এখান থেকে তুমি আর কোথাও চলে যেয়ো না । গেলে তোমার লোকসান কি ? জবাব দিতে পারিলাম না, চুপ করিয়া রছিলাম । বৈষ্ণবী বলিল, মুরারিঠাকুরের একটি গান আছে—”সখি হে ফিরিয়া আপনার ঘরে ষাও, জীয়স্তে মরিয়া ষে আপনা খাইয়াছে তারে তুমি কি আর বুঝাও।” গোসাই, বিকালে তুমি কলকাতায় চলে যাবে, আজ একটা বেলার বেণী বোধ করি এখানে আর থাকতে পারবে না—ন ? বলিলাম, কি জানি, আগে সকালবেলাটা কাটুক। বৈষ্ণবী জবাব দিল না, একটু পরে গুনগুন করিয়া গাহিতে লাগিল— “কহে চণ্ডিদাস গুন বিনোদিনী মুখ দুখ দুটি ভাই— মুখের লাগিয়া যে করে পরিতি দুখ যার তারই ঠাই ।” ৰামিলে বলিলাম, তারপরে ? و به