পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (চতুর্থ সম্ভার).djvu/৭৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰীকান্ত বৈষ্ণবী সাজিট চাপা-ডালে ঝুলাইরা আগলের বাধন খুলিতেছিল, আশ্চৰ্য্য হইয়। ফিরিয়া চাহিল, হঠাৎ তোমার হ’লো কি গোসাই ? নিজের কথাটা নিজের কানেও কেমন খাপছাড়া ঠেকিয়াছিল, তাহার সবিস্ময়প্রশ্নে মনে মনে ভারী অপ্রতিভ হইয়া গেলাম। মুখে উত্তর যোগাইল না, লজ্জিতের আবরণ একট। অর্থহীন হাসির চেষ্টাও ঠিক সফল হ’ল না, শেবে চুপ করিয়া রছিলাম। বৈষ্ণবী ভিতরে প্রবেশ করিল, সঙ্গে আমিও গেলাম। ফুল তুলিতে আরম্ভ করিয়া সে নিজেই কহিল, আমি মুখেই আছি গোসাই । যার পাদপদ্মে আপনাকে নিবেদন করে দিয়েচি কখনো দাসীকে তিনি পরিত্যাগ করবেন না। সন্দেহ হইল কথার অর্থটা বেশ পরিষ্কার নয়, কিন্তু সুস্পষ্ট করিতে বলারও ভরসা হইল না । সে মৃদু-গুঞ্জনে গাহিতে লাগিল—“কালা মানিকের মালা গাথি নিব গলে, কামু গুণ যশ কানে পরিব কুণ্ডলে । কামু অম্বুরাগে রাঙা বসন পরিয়া, দেশে দেশে ভরমিব যোগিনী হুইয়া । যদুনাথ দাস কহে—” ধামাইতে হুইল । বলিলাম, যজুনাথ দাস থাক, ওদিকে র্কাসরের বান্তি শুনতে পাচ্ছে কি ? ফিরবে না ? সে আমার দিকে চাহিয়া মৃদুহাস্তে পুনরায় আরম্ভ করিল “ধরম করম যাউক তাহে না ডরাই, মনের ভরমে পাছে বঁধুরে হারাই ”আচ্ছা নতুনগোসাই, জানো মেয়েদের মুখের গান অনেক ভালো লোকে শুনতে চায় না, তাদের ভারী খারাপ লাগে ? বলিলাম, জানি। কিন্তু আমি অতটা ভালো বৰ্ব্বর নই। তবে বাধা দিয়ে আমাকে থামালে কেন ? ওদিক হয়ত আরতি শুরু হয়েচে–তুমি না থাকলে তো তার অঙ্গহানি হবে। এটি মিথ্যে ছলনা গোসাই । ছলনা হবে কেন ? কেন তা তুমিই জানো। কিন্তু এ-কথা তোমাকে বললে কে ? আমার অভাবে ঠাকুরের সেবায়ু সত্যিই অঙ্গহানি হতে পারে এ কি তুমি বিশ্বাস করে ? করি। আমাকে কেউ বলেনি কমললতা—আমি নিজের চোখে দেখেচি । সে আর কিছু বলিল না, কি একরকম অন্তমনস্কের মত ক্ষণকাল আমার মুখের পানে চাহিয়া রছিল, তারপরে ফুল তুলিতে লাগিল। ডাল ভরিয়া উঠিলে কহিল, হয়েচে—আর না । স্থলপদ্ম তুললে না ? না, ও আমরা তুলিনে, ঐখান থেকে ঠাকুরকে নিবেদন করে দিই। চল এবার ষাই । জালে ফুটিয়াছে, কিন্তু গ্রামের একাস্তে এই মঠ—এদিকে বড় কেহ আঁসে না। ק"מ)